Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জিএসপি ও জিএফসি সহায়তা

ট্রেড ইউনিয়নে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশ থাকছে

সংশোধিত শ্রম আইন-২০২৩: সরকার আলোচনা করেই আইন সংশোধন করেছে -মো. হাতেম

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রেড ইউনিয়নে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশ থাকছে

তিন হাজার পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করছে এমন কারখানা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ শতাংশ কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক কর্মরত প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর্মী যুক্ত থাকতে হবে। অন্যথায় ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। এমন বিধান রেখে সংশোধিত শ্রম আইন-২০২৩ এর বিল সর্বশেষ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পাশ হয়। অবশ্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে আগের আইনে ৩০ শতাংশ শ্রমিকদের সম্পৃক্ত থাকার বিধান ছিল।

সেপ্টেম্বরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) কাউন্সিল বৈঠক হয়। এতে নভেম্বরের মধ্যে সংশোধিত শ্রম আইন পাশের নিশ্চয়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া কারখানা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ১০ শতাংশ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কথাও বলেছে দেশটি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শর্ত দেওয়া হয় যে শ্রম আইনের সংশোধন করলে বন্ধ ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস’ বা জিএসপিসহ অন্যান্য সুবিধা চালু হবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সংশোধিত শ্রম আইন পাশ হয়। এতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ১০ শতাংশ শ্রমিক অংশগ্রহণের পরিবর্তে ১৫-২০ শতাংশ রাখা হয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বলেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইপিজেড) বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের নিয়ে আসার পূর্বে শর্ত ছিল সেখানে কোনো ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদন দেওয়া হবে না। কিন্তু এখন সে শর্ত উপেক্ষা করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিধান চালু করলে বিরূপ প্রভাব পড়বে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর। যে কারণে সরকার সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কোনো অধ্যায় যুক্ত করেনি সংশোধিত শ্রম আইনে। সূত্র জানায় টিকফা বৈঠকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনের (জিএফসি) সহায়তার তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান জিএফসির ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল আছে। সেখান থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ইএসটিআর প্রতিনিধিদল বলেছে, এই তহবিল পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। এজন্য সংশোধিত শ্রম আইন নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদে পাশ দেখাতে হবে। সংশোধিত শ্রম আইনের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) টেকনিক্যাল সুপারিশগুলো বিবেচনায় থাকতে হবে। ইএসটিআর বলেছে, এসব ক্ষেত্রে উন্নতি দেখাতে পারলে বাংলাদেশকে জিএফসি তহবিল সুবিধায় নাম যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

শ্রম আইন সংশোধনের পর জিএসপি এবং জিএফসি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম যুগান্তরকে জানান, সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আইন সংশোধন করেছে। এটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) চাহিদাও ছিল। কিন্তু দেখা গেছে, ১০ থেকে ২০ হাজার কর্মী কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানে ২০ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের জন্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়। যে কারণে বড় কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নে গঠনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। জিএসপি পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ইউএসএ অতীতে কখনোই বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়নি। শুধু যে এই শর্ত তা নয়, দেখা যাবে একটি পূরণ করলে আবার নতুন শর্ত দেবে ইউএসএ। তার মতে, জিএসপি পাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক। ফলে আগামীকাল যদি বলা হয় প্রতিটি কারখানায় একজন শ্রমিক দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা হবে। সেক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা মিলবে না। তিনি আরও বলেন, এখন সরকারের পক্ষ থেকে জিএফসি সহায়তা চাইতে পারে।

নতুন সংশোধিত শ্রম আইনে যা থাকছে : ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে সেখানে আরও বলা হয়, একই মালিকের একই শিল্পের একাধিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠলেও সেটি একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে ধরা হবে। সেক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন একটি গঠন হবে। সেখানে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইউনিয়নের সদস্যরা ইচ্ছে করলে ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির মোট কর্মকর্তা ১০ শতাংশ নির্বাচন করতে পারবেন। সংশোধিত আইনে বন্দর কর্তৃপক্ষে ট্রেড ইউনিয়ন প্রসঙ্গে বলা হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত কর্মচারীগণ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। এই আইন প্রণয়নের সময় কোনো বন্দরে ট্রেড ইউনিয়ন না থাকলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে সেখানে গঠন করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত শ্রম আইনে শ্রমিক নিয়োগ, চিকিৎসা, ছুটিসহ নানা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এছাড়া শ্রমিকদের জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা, সামাজিক সুরক্ষা, বিনোদন সংক্রান্ত কার্যক্রম, বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে অবহিত করা হবে। এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম লিঙ্গ (প্রতিবন্ধী) নির্বিশেষে কোনো ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম