Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গরিবের খাবার নিয়েও সিন্ডিকেট

সাধ থাকলেও পণ্য কেনার সাধ্য নেই অনেকের

নিম্নআয়ের মানুষের ডাল-ভাত-আলুভর্তা জোগাড়ও কঠিন হয়ে পড়েছে

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাধ থাকলেও পণ্য কেনার সাধ্য নেই অনেকের

নিত্যপণ্য, ফাইল ছবি

বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গরিবের খাবারেও সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১৫০ ও আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মোটা চাল কেজিতে তিন টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা হয়েছে। আর ডাল কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা। বাজারে পণ্য থাকলেও দামের তা কেনার সাধ্য নেই নিম্নআয়ের ভোক্তার। ফলে দুস্থদের পক্ষে ডাল-ভাত ও আলুভর্তা জোগানও কঠিন হয়ে পড়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট অতিমুনাফার লোভে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে কষ্ট দিচ্ছে।

বাজারে ৭০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। কিছু সবজির দাম ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছে। আর মাছ-মাংসের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটোল-চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে ৬০-৮০ টাকা, প্রতিকেজি টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, শিম ১৫০-১৬০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা, কচুমুখি ৯০-১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতিকেজির দাম ৮০ টাকা।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক মুরগির কেজি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকা, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০, চিংড়ি প্রতিকেজি ৭০০-১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ প্রতিকেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় করতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে জুন থেকে অস্থির আলুর বাজার। সে সময় প্রতিকেজি আলু খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। পরে তদারকি জোরদার করলে কেজি ৩৫ টাকায় নেমে আসে। তদারকি শিথিল হলে আগস্টের শেষে ফের বাড়তে থাকে দাম। সে সময় কেজি ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫ টাকায় স্থিতিশীল থাকে। এর পর ফের অসাধুরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। অক্টোবর মাসের শেষদিকে প্রতিকেজি ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। কৃষক তা সর্বোচ্চ ১৫ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। যা খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। হিমাগার মালিক ও মজুতদাররা চাহিদার তুলনায় কম আলু বাজারে ছেড়ে দাম বাড়িয়েছে। দাম বৃদ্ধির পেছনে কারা দায়ী তা সরকারি সংস্থাও জানে। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমদানির খবরে দাম কিছুটা নিম্নমুখী।

অন্যদিকে বাজারে বাড়তি মুনাফা করতে চালের বাজারে মিলারদের চোখ পড়েছে। খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন খেটে খাওয়া মানুষের এককেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা। যা আগে ৫৩ টাকা ছিল। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহ আগে গরিবের মোটা, মাঝারি চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে হুহু করে বাড়ছে দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়ায় ক্রেতার পকেট কাটা যাচ্ছে।

এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানিতে প্রতিটন ৮০০ ডলার মূল্য বেঁধে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে নতুন দামে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশ না এলেও ভারত আমদানি মূল্য ঘোষণার পরপরই দেশে কারসাজি করে বাড়ানো হয় দাম। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায়। যা সাত দিন আগেও ১০০ টাকা ছিল। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসেন দিনমজুর মো. হাসান। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। আমাদের মতো গরিবের গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাব তা চিন্তাও করতে পারি না। পরিবারের জন্য দুই বেলা আলুভর্তা, ডাল-ভাত জোগাড় করব তারও উপায় নেই। এসবের দামও অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। সব মিলে আমাদের মতো মানুষের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মা, স্ত্রী এবং দুই মেয়ে নিয়ে আমার পাঁচজনের সংসার। সবার খাবারের জোগান আমাকেই করতে হয়। কিন্তু সীমিত আয় দিয়ে বাজার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় বাধ্য হয়ে চাহিদার তুলনায় কম পণ্য কিনতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এতে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। যারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে কেনার সময় অনেকে পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে, বাজারে তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম