বাংলাদেশের নির্বাচনি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র
সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ: ম্যাথু মিলার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই। আর তা হলো-বাংলাদেশে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্র খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক দুটি প্রশ্ন করেন। এগুলো হলো-বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কি সম্ভব এবং মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কি? জবাবে মিলার বলেন, তারা স্পষ্ট করে বলেছেন-যুক্তরাষ্ট্র অন্য সরকারের কাছে যেমনটা আশা করে, বাংলাদেশ সরকারের কাছেও তেমনটা আশা করে। আর তা হচ্ছে-তারা কূটনীতিকদের সুরক্ষায় ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকার, সব রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রর চাওয়া একই। তা হলো, বাংলাদেশে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদের সংলাপে বসার ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আহ্বানের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন-মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ করেন তাহলে তিনি (শেখ হাসিনা) বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন। বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় দুই নেতা নিহত হয়েছেন এবং বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় দুই শীর্ষ বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে পারে বলে কি আপনি মনে করেন? জবাবে মিলার বলেন, প্রশ্নের প্রথম অংশ নিয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি আগে যে লক্ষ্যগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, তারা বিশ্বাস করেন, তা অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে তিনি (মিলার) বলেন, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনি পরিবেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা সহিংসতার ঘটনাগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। তারা সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এ সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সবাই যাতে একত্রে কাজ করেন। সেজন্য তারা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
২৮ অক্টোবর পুলিশ অপ্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করেছে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, বাংলাদেশে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ অপ্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করেছে। সব পক্ষ সহিংসতা করলেও পুলিশ বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে। বন্দিদের মুক্তি ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ১ নভেম্বর নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে সংস্থাটি এ আহ্বান জানায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে দাবি করা হয়-২৮ অক্টোবরের সহিংসতা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী চলমান সহিংসতায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন। কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। এতে বলা হয়, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেওয়া নিজেদের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে চলছে সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনেক বাংলাদেশি বলেছেন-তারা সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভোটকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালাচ্ছে সরকার।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে-মহাসমাবেশে পুলিশ অতিরিক্ত রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। সরকারের উচিত নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সহিংস বিক্ষোভের জবাবে জাতিসংঘের ‘বেসিক প্রিন্সিপাল অন দ্য ইউজ অব ফোর্স অ্যান্ড ফায়ারআর্মস বাই ল এনফোর্সমেন্ট অফিসিয়ালস’ মেনে চলতে প্রকাশ্যে নির্দেশ দেওয়া। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের কয়েক হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গণগ্রেফতারে এটাই মনে হয়-বিরোধীদলীয় নেতাদের পর্যায়ক্রমিকভাবে গ্রেফতার ও অভিযুক্ত করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ আছে।