উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু টানেল
চট্টগ্রামে সাজসাজ রব
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি। এ দুই কর্মসূচিকে ঘিরে চট্টগ্রামে এখন সাজসাজ রব। জেলা প্রশাসন ও টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা টানেল পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকার সাংবাদিকদের প্রথমবারের মতো টানেলে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এদিকে বিকালে কেইপিজেড মাঠ পরিদর্শন করে জনসভার মঞ্চ ও মাঠ তৈরির সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু টানেলের সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখভাল করতে যান জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান ও টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো নদীর তলদেশে নির্মিত এটাই প্রথম টানেল। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। টানেলে চট্টগ্রাম, বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য স্বপ্নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রামের মানুষ এ টানেল উদ্বোধনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়াও আরও ১৯টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, গাড়ি চলাচলের জন্য টানেলটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্ত পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ টানেল পার হতে সময় লাগবে মাত্র ৩ মিনিট। টানেলের ভেতরে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলবে না। হেঁটেও টানেল পার হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, টানেলটি ৫ বছর পর্যন্ত চীনের নির্মাণ সংস্থা মেনটেন্যান্স করবে। এ পাঁচ বছরে তারা বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেবে। টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে টোল বক্স। এখানে ১৬টি কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিই স্বয়ংক্রিয় ও অত্যাধুনিক। পতেঙ্গা প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে স্ক্যানার। টানেলের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় থাকবে।
টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে সরেজমিন পরিদর্শনকালে বৃহস্পতিবার দেখা যায়, পুরো এলাকা দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে। প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর লোগো। সড়ক, বিভাজক, টানেল গেটসহ সব জায়গায় লেগেছে তুলির আঁচড়। ৩ মিনিটের জন্য হলেও এ টানেলে অনুভব হবে একধরনের রোমাঞ্চ।
জনসভা ঘিরে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা : সকালে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেল উদ্বোধনের পর কেইপিজেড মাঠে জনসভা শেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে। এদিন ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচি থাকায় প্রধানমন্ত্রীর সফর সংক্ষিপ্ত করা হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করলেও উত্তর দক্ষিণ ও মহনগরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সব জায়গা থেকেই নেতাকর্মীদের আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতেই দূরদূরান্তের নেতাকর্মীদের চলে আসতে বলা হচ্ছে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার মাঠে দেখা যায়, ৮ ফুট উচ্চতা, ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৮ ফুট প্রস্থের নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং দায়িত্বশীল নেতা ছাড়া কাউকে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জনসভাস্থল ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের প্রদর্শনের জন্য লাগিয়েছেন অন্তত ৪ হাজার ডিজিটাল ব্যানার।
রাঙ্গুনিয়া যুবলীগের প্রস্তুতি সভা : বৃহস্পতিবার রাঙ্গুনিয়া সদরে উপজেলা যুবলীগ প্রস্তুতি সভায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেছেন, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসী ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। সাঈদীর রায়ের পর গাছ কেটে, গাড়ি ভেঙে, মানুষ পুড়িয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে যে ভয়াবহ রূপ জামায়াত-শিবির দেখিয়েছিল, সেই দক্ষিণ চট্টগ্রামেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী টানেল করে দিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিএনপি, জামায়াত-শিবির আবারও দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। যুবলীগ তাদের প্রতিহত করবে।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বদিউল খায়ের চৌধুরী লিটনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুচের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উত্তর জেলা যুবলীগের সহসভাপতি শামশুদ্দোহা সিকদার আরজু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগ সাংস্কৃতিক সম্পাদক ওসমান চৌধুরী প্রমুখ।