রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল
সিজিপিওয়াই থেকে চুরি হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) যেন চোরের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত সুইপার থেকে হেড টিএক্সআরের (ট্রেন পরীক্ষক) যোগসাজশে রেলের মূল্যবান জিনিসপত্র, যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ চুরির কাজে ইয়ার্ডের টুলভ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সিজিপিওয়াইতে চুরির সঙ্গে খোদ রেলের অসাধু কর্মচারী চক্র জড়িত থাকায় অনেক সময়ই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এছাড়া অধিকাংশ চুরির ঘটনা প্রকাশ পায় না। ফলে চোরের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
সিজিপিওয়াই নগরীর বন্দর থানা এলাকায় অবস্থিত। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা রেলের পণ্য রাখা হয়। এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) পর্যন্ত কনটেইনার ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া এখান থেকে বিটিও (ট্যাংক ওয়াগন), বিসি ওয়াগন ও বিকেএইচ ওয়াগন দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। এতে একটি লোকোশেড ও সিপিএ (ট্রানজিট) ইয়ার্ড রয়েছে। অথচ দিন দিন রেলের গুরুত্বপূর্ণ এ শাখাটি অরক্ষিত হয়ে পড়ছে।
রেলের ব্রেক ব্লক চুরি করে শপিং ব্যাগে নিয়ে যাওয়ার সময় ৬ সেপ্টেম্বর হাতেনাতে আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে আরএনবি। তিনি সিজিপিওয়াইতে টিএক্সআরের অধীনে সুইপার পদে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় তাকেসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে।
সরেজমিন রোববার সকালে সিজিপিওয়াই গিয়ে দেখা যায়, ইয়ার্ডের দুই নম্বর লাইনে অবস্থান করছে নির্ধারিত টুলভ্যানটি (বিসি ১০০০১৩)। এ টুলভ্যানে সাধারণত দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন উদ্ধারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করা হয়। তবে সেখানে পাওয়া যায় ৫২টি চাকার বক্স। যেগুলো এ টুলভ্যানে থাকার কথা নয়। এসব বক্সের প্রতিটির ওজন প্রায় এক মন। এছাড়া ছিল বেশ কিছু লোহার পাত। অভিযোগ রয়েছে, এসব বক্স ও লোহার পাত স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রির উদ্দেশ্যেই টুলভ্যানে গোপনে লোড করা হয়েছিল। সুযোগের অভাবে টুলভ্যান থেকে মূল্যবান এসব মালামাল সরাতে পারেনি চক্রের সদস্যরা।
ইতোমধ্যে টুলভ্যানের মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পুরাতন পোর্ট মার্কেটসংলগ্ন রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে হাসেমের স্ক্র্যাপের দোকান। মূলত সেই দোকানটিতে লোহার পাত বিক্রির জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর বিকালে সিজিপিওয়াই স্টোর চাকার বক্সগুলো টুলভ্যানে তোলা হয়। কিন্তু বগি নেওয়ার দিন নির্ধারিত হয়নি বলে টুলভ্যান থেকে মালামালগুলো নামাতে পারছিল না চক্রটি। ওই দিন বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টায় পাঁচ কর্মচারী এসব মালামাল টুলভ্যানে লোড করেন। এ প্রতিবেদকের কাছে যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। টুলভ্যানে মালগুলো রাখার সঙ্গে রশিদুল আলম বাবলু নামে এক কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। তিনি সিজিপিওয়াইতে এসএস ফিটার হিসাবে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও রেলের মালামাল চুরি করে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে সিজিপিওয়াই হেড টিএক্সআর শাহাদাৎ হোসেন আজাদের অফিসে গেলে তিনি ঘটনার বিষয়ে জেনে ট্রেনিং সেন্টারে ক্লাস নেবেন জানিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান।
উপস্থিত ভারপ্রাপ্ত টিএক্সআর ছাবের আহম্মদ যুগান্তরকে বলেন, বিদেশ থেকে আসা ট্রেনের প্রতিটি চাকায় এক জোড়া বক্স থাকে। এর মধ্যে একটি বক্স এখানে খুলে রাখা হয়। অন্যটি টঙ্গীতে খোলা হয়। টঙ্গী থেকে টুলভ্যানের মাধ্যমে বক্সগুলো নিয়ে এসে স্টোর রুমে রাখা হয়। কিন্তু স্টোর থেকে এসব বক্স টুলভ্যানে উঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। নিশ্চয় তা উঠানোর ক্ষেত্রে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল।
আরএনবির সিজিপিওয়াই চৌকির চিফ ইন্সপেক্টর এয়াছিন উল্যাহ বলেন, টুলভ্যানে কী মালামাল রাখা হয় কিংবা স্টোর থেকে কী মালামাল বের হয় সেগুলো আমাদের দেখার সুযোগ নেই। আমরা কেবল সিজিপিওয়াই থেকে অনুমতি ছাড়া রেলওয়ের কোনো জিনিস বের হচ্ছে কিনা সেটি নজরদারিতে রাখি।
এর আগে ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি নতুন তিনটি রেলইঞ্জিন সিজিপিওয়াইতে রাখা হয়। ১০ জুলাই পশ্চিমাঞ্চলে নেওয়ার প্রস্তুতিকালে ইঞ্জিনের বেশ কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়। এ ঘটনা দেখতে পান ইয়ার্ডে কর্মরত কয়েকজন। তবে কখন চুরির ঘটনা ঘটেছে তা জানাতে পারেননি রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এ নিয়ে আরএনবির পক্ষ থেকে এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ের পক্ষ থেকেও পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে আরএনবির অস্ত্র শাখার চিফ ইন্সপেক্টর রেজওয়ানুর রহমান বলেন, চুরির ঘটনাটি তদন্তাধীন। তদন্তাধীন বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।