Logo
Logo
×

শেষ পাতা

হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্প

বাদ যাচ্ছে ৫ খাতের ব্যয় প্রস্তাব

পিইসি সভায় উত্থাপন করবে পরিকল্পনা কমিশন * অত্যধিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন সংশ্লিষ্টরা

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাদ যাচ্ছে ৫ খাতের ব্যয় প্রস্তাব

অপ্রয়োজনীয় মনে করায় প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে ৫ খাতের ব্যয় প্রস্তাব। সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যধিক ব্যয় প্রস্তাব করায় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ, হবিগঞ্জ স্থাপন’ প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। শিগগিরই বসতে যাওয়া প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ দেবে পরিকল্পনা কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবে এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের জন্য শাস্তির বিধান থাকা দরকার। এক্ষেত্রে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের জন্য যেমন, আবার পরিকল্পনা কমিশন যদি ভালোভাবে বিশ্লেষণ না করে অনুমোদনের সুপারিশ দেয়, তাদের জন্যও একই বিধান থাকতে হবে। কেননা পরিকল্পনা কমিশনের কাজ হলো রেট শিডিউলের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বা সেবার দাম ধরা হয়েছে কি না, সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা। সেই সঙ্গে ‘বিওকিউ’ (বিল অব কোয়ালিটি) বা কোন জিনিস কতটুকু লাগবে, এর পরিমাপ করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রেট শিডিউল ঠিক থাকে, দামও ঠিক থাকে; কিন্তু জিনিসের পরিমাণ বাড়িয়ে ধরা হয়। এটা একটি অপকৌশল। এগুলো ধরা পরিকল্পনা কমিশনের কাজ। বাস্তবতা হলো, অনেক ক্ষেত্রে এগুলো ধরা হয় না।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে যৌথভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এছাড়া ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ১৫টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, ১০ অনাবাসিক ভবন তৈরি এবং ৫ হাজার ৯১৩টি আসবাবপত্র কেনা হবে। আরও আছে ১২ হাজার ৫৫০টি মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং একটি যানবাহন কেনার প্রস্তাব।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পের আওতায় একটি মোটরযান ক্রয়ের সঙ্গে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টের জন্য ১০ লাখ এবং মোটরযান মেরামত বাবদ ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, যানবাহন কেনা স্থগিত আছে। তবে জনবল কমিটির সুপারিশে যেহেতু একটি যানবাহন কেনার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, তাই গাড়ি কেনার ব্যয় ধরা থাকলেও বাকি দুই খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পে স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে ২৪০ জনের জন্য ৪৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তবে কাদের কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, সেটি ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কোথাও পাওয়া যায়নি। ফলে এ খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হবে। চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা সরঞ্জামাদি বাবদ ৩৬ লাখ এবং রাসায়নিক বাবদ ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এগুলো প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্রয়োজন হবে। ফলে এ দুই খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হবে। সম্মানি বাবদ ১২ লাখ টাকা বাদ দিতে হবে। মূল্য সংযোজন কর বাবদ ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে; কিন্তু প্রতিটি আইটেমের সঙ্গে এই কর যুক্ত করা থাকে। তাই এটি বাদ দিতে হবে।

এদিকে যেসব খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে সেগুলো হলো-মেডিকেল কলেজের জন্য চার হাজার ১০৩টি আসবাবপত্র বাবদ ৪ কোটি ৫৫ লাখ এবং হাসপাতালের ৭৯৬টি আসবাবপত্রের জন্য ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া নার্সিং কলেজের জন্য ১ হাজার ১৪টি আসবাবপত্রের জন্য ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার এবং প্রকল্প অফিসের ৪৫টি আসবাবপত্রের জন্য ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো আসবাবের অত্যধিক দাম ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো কমিটির মাধ্যমে বাজারদর নির্ধারণ করা হয়নি। মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের জন্য ১৩ হাজার ৫৫৬টি যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ ধরা হয়েছে ১৩৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা জানত চাইবে কমিশন। সেই সঙ্গে এগুলো ব্যয় অত্যধিক বলে মনে করা হচ্ছে। আরও আছে আপ্যায়ন, ডাক, শ্রমিক মজুরি, নিবন্ধন ফি, ব্যাংক চার্জ, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ, মুদ্রণ ও বাঁধাই এবং স্টেশনারি খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পের আওতায় আবাসিক ও অনাবাসিক মিলে ২৫টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। এ বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এক্ষেত্রে এত ভবন না করে প্রথম ফেইজে স্বল্পসংখ্যক ভবন করা যায় কি না, সেটি আলোচনা করা হবে পিইসি সভায়। আরও বলা হয়েছে, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ৩০ একর জমি রাস্তা থেকে ১২-১৫ ফুট নিচু। দোফসলি এ জমির ৪-৫ একর জলাধার বা খালবিল রয়েছে। এসব জমি অধিগ্রহণে ৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। পাশাপাশি জমি ভরাট করতে ৪১ কোটি ৯১ লাখ টাকার প্রস্তাব আছে। ভূমির ধরন বা প্রকৃতি বিবেচনায় প্রকল্পের সাইট পরিবর্তন করা যায় কি না, সে বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে পিইসি সভার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম