Logo
Logo
×

শেষ পাতা

যাত্রীরা ভিজে একাকার

ট্রেনেও অঝোরে বৃষ্টি!

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রেনেও অঝোরে বৃষ্টি!

আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ ফেটে পড়ছে বৃষ্টির পানি -সংগৃহীত

রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন নতুন ট্রেনও যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টি চলছিল। ওই সময় ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেসে ট্রেনের ছাদ ভেদ করে ভেতরেও বৃষ্টির পানি পড়ছিল। সেটি ছিল এসি ও শোভন চেয়ার কামরায়। এ দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে রেলের ব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এটি ময়মনসিংহ-চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেসের ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। খানিকটা যেতেই টানা বৃষ্টির কবলে পড়ে ট্রেনটি। ট্রেনটি ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছে।

ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রী জুলহাস হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ট্রেনটি ছাড়ার সময়ই বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময় ২-৩টি কামরায় অঝোরে বৃষ্টির পানি পড়ছিল। একেকটি কামরায় শতাধিকের বেশি যাত্রী ছিলেন। এসব কামরার অধিকাংশ যাত্রী ভিজে রীতিমতো একাকার হয়ে গিয়েছিলেন।

ওই ট্রেনে থাকা এক টিটিই জানালেন, সারা পথই যাত্রীদের গালমন্দ শুনতে হয়েছে তাদের। প্রাণভয়ে অন্য একটি বগিতে গিয়ে নিশ্চুপ বসে ছিলেন তিনি। বাধ্য হয়ে ভিজতে হয়েছে যাত্রীদের। অধিকাংশ সিট (ফোমের তৈরি) বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়।

এছাড়া ছবিতে দেখা যায়, কিছু যাত্রী বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে কোনায় সিঁটিয়ে বসে আছেন। ট্রেনের কামরায় পানি জমে রয়েছে। কেউ কেউ বৃষ্টির পানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ওয়াশরুমে আশ্রয় নিয়েছেন।

উল্লিখিত ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান যুগান্তরকে বলেন, রেল উন্নীত হচ্ছে। তারপরও ইঞ্জিন-কোচের স্বল্পতা রয়েছে। পুরাতন ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।

পুরাতন কোচগুলোর ক্ষেত্রে এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সমস্যার সমাধানে কারখানায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে দায়িত্বরত ট্রেনের পরিবহণ পরিদর্শক (টিআই) শাহিনুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিনই বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টির পানি পড়ছিল। আমরা নিরুপায় ছিলাম। ওই সময় বৃষ্টির পানি বন্ধ করার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ২-৩টি কামরায় এমনটা হয়েছে। কামরাগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ট্রেনের সিনিয়র ইন্সপেক্টর মো. সোহেল জানান, বৃষ্টি হলে এসব ট্রেনের ছাদ ভেদ করে বৃষ্টির পানি ভেতরে পড়তে থাকে। চলন্ত অবস্থায় সেই পানি রোধও করা যায় না। আমরা তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই এ বিষয়ে তারা যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, তারা টিকিট কেটে ট্রেনে চড়েন। তাই যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।

এদিকে রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় সময়ই বিভিন্ন ট্রেনের ছাদ ভেদ করে বৃষ্টির পানি পড়ার ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে মেইল-লোকাল, কমিউটারসহ পুরাতন কোচ নিয়ে চলা আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে চড়া যাত্রীরা এমন দুর্ভোগের অভিযোগ করছেন।

রেলওয়ের এক ট্রেন পরিদর্শক জানান, আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে বৃষ্টির পানি পড়ার মতো সমস্যা হলে কিছুটা জানাজানি হয়। কিন্তু মেইল-লোকাল ট্রেনগুলোতে এমন সমস্যা যুগের পর যুগ ধরে চলছে। মাঠপর্যায় থেকে সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হয় না।

তাছাড়া কিছু কোচ চিহ্নিত করে মেরামত করলেও-বছরখানেক না যেতেই পুনরায় ছাদ ভেদ করে পানি পড়তে থাকে।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) পার্থ সরকার বলেন, ‘বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে বৃষ্টির পানি পড়ার বিষয়টি আমরা জেনেছি। নিশ্চয় সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এমন সমস্যা সমাধানে আমি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে এসব কোচ মেরামত করা হচ্ছে। পুরাতন কিছু কোচ দ্বারা সেবা দিতে গিয়ে হঠাৎ এমনটা হচ্ছে। শুধু বিজয় এক্সপ্রেস নয়, আর কোন কোন ট্রেনে এমন সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম