বেঁধে দেওয়া দাম তিন সপ্তাহ পরও অকার্যকর
ফের সেঞ্চুরির পথে পেঁয়াজ, আলুর দাম হাফ সেঞ্চুরি
ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফের সেঞ্চুরির পথে পেঁয়াজ, আলুর দাম হাফ সেঞ্চুরি
সরকারের পক্ষ থেকে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার তিন সপ্তাহ পার হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। বরং উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের দাম ফের সেঞ্চুরির পথে হাঁটছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও সাত দিনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১২ টাকায় প্রতি পিস ডিম বিক্রির কথা থাকলেও ভোক্তাকে ১৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার দায় সেরেছে। সিন্ডিকেট ভেঙে মূল্য কার্যকর করতে না পারায় বাজারে ভোক্তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। আর অতিমুনাফা লুটছে সেই চিহ্নিত সিন্ডিকেট।
এদিকে বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ ও আলুর দাম বৃদ্ধির চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক খুচরা পর্যায়ের পণ্যমূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে। টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ও আলুর দাম ৫ টাকা বেড়েছে। নতুন করে দাম না বাড়লেও সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ডিম, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কারসাজি করছে। তারা অতিমুনাফা করতে প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৬ টাকায় নিয়ে ঠেকায়। আলুর কেজি ৫০ এবং পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি করে। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের দাম ১২, প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ এবং পেঁয়াজের ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই দফায় ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আলুর হিমাগার থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করছে। এরপরও দাম কমাতে পারছে না। পরিস্থিতি এমন-সম্প্রতি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পেরে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। আলু আমদানিরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তারপরও বাজারে ক্রেতার কোনো লাভ হচ্ছে না। পণ্য তিনটি বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা, যা সাত দিন আগে ৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। এতে পিস হিসাবে মূল্য হয় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। আর এক পিস কিনলে বাজার কিংবা এলাকার মুদির দোকানে ১৩ টাকা করে রাখা হচ্ছে। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকারের আদেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। বাজারে তদারকি সংস্থা অভিযান পরিচালনা করেও তা কার্যকর করতে পারছে না। তারা বলছে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আমদানির সুপারিশ করা হবে। এতে অসাধুরা আরও সুযোগ পায়। তাই মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের একটি শক্তিশালী পলিসি থাকতে হবে। তা না থাকলে অসাধুদের কারসাজি রোধ করা সম্ভব নয়। সব মিলে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় বাজারে ভোক্তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। তাই এ থেকে ভোক্তাদের বের করে আনতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি জানান, এখনই সেটা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, আলুর দাম কারা বাড়াচ্ছে, সে তথ্য আমরা সরকারকে দিয়েছি। কোল্ড স্টোরেজে যে পরিমাণ আলু আছে, তা দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটানো যাবে। কিন্তু সংরক্ষণকারীরা এখনো অতিমুনাফার লোভে বাড়তি দরে বিক্রি করছে। তাই সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারায় বাজারে ক্রেতাকে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, সরকার ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার পর পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে। খুচরা বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু সবাই জানে ডিমের দাম নিয়ে কারা কারসাজি করে। চাইলেই তারা সমাধান করতে পারে। কিন্তু কেন করছে না জানি না।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র ঘোষ যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে এখনো কারসাজি চলছে। আমদানিকারকরা মূল্য এখনো বাড়িয়ে রেখেছে। এখন বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে তারা আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে অধিদপ্তরের পক্ষ থকে সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অসাধুদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম : বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামানের নির্দেশনায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার এলাইড কোল্ড স্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপনের তত্ত্বাবধানে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমূল হুদা এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের মুন্সীগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অভিযানে আনসার ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের সময় ১৯ টন আলু সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা দরে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়।
রাজধানীর বাজারদর : এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে নতুর করে ছোলা, হলুদ ও আদার দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৯০ টাকা, যা সাত দিন আগেও খুচরা বাজারে ২০০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৩৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা, যা আগে ৮০-৮৫ টাকা ছিল।