শুটকী নদী উদ্ধারের দাবি বিভিন্ন সংগঠনের
বানিয়াচংয়ে আস্ত নদী ব্যক্তিমালিকানায়
দীর্ঘ ২৬ মাইল নদী আদালতের কাছে ‘বদ্ধ জলাভূমি’ দেখিয়ে পারিবারিক সম্পত্তি করে নেন!
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নদী নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। আস্ত এক নদীর মালিক এক ব্যক্তি। তার নাম দেওয়ান রাজা। ২৬ মাইল দীর্ঘ শুটকী নদীকে আদালতের কাছে ‘বদ্ধ জলাভূমি’ দেখিয়ে পারিবারিক সম্পত্তি করে নেন তিনি। ব্যক্তিমালিকানার কবল থেকে উদ্ধার করে নদীটিকে জীবন্ত সত্তা হিসাবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দখলের গ্রাসে শুটকী নদীর ২৬ কিলোমিটার, ৫০ বছরের নদী লুট ঠেকাতে নাগরিক আহ্বান’ শীর্ষক সেমিনারে ওই দাবি জানানো হয়। যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন, নোঙর, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইনিশিয়েটিভ ফর পিস।
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন ও ইনিশিয়েটিভ ফর পিস-এর চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস। এছাড়া বক্তব্য দেন প্রাণ প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দ রেজওয়ান আহসান, নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক প্রধান নির্বাহী শিপা হাফিজা, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আনিসুজ্জামান, আরডিআরসি চেয়ারম্যান মো. এজাজ, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় শুটকী নদীর অবস্থান। নদীটি উজানে খোয়াই এবং ভাটিতে যমুনা নদীর সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘ প্রবাহিত এ নদীটি দিয়ে এখনো হবিগঞ্জ থেকে ধানবোঝাই নৌকা যমুনা নদীতে যায়। অথচ এই নদীতে মাছ ধরতে গেলেই নদীর তথাকথিত মালিক বন্দুক হাতে তেড়ে আসেন। নিজ সুবিধা হাসিলের জন্য নদীর বিভিন্ন স্থানে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছেন তিনি। জনগণের সম্পদের ওপরে এই চরম আগ্রাসী কার্যক্রম নজিরবিহীন।
বানিয়াচংয়ের জমিদার পরিবার শুটকী নদী নিজেদের দখলে নিতে ১৯৬০ সালে ইয়াহিয়া ফিশারিজ প্রাইভেট কোম্পানি নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। পাকিস্তান আমলে তারা নদীর দখল না পেলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে নদীটিকে বিল দেখিয়ে ভূমির নামজারি, দখল ও ভোগের দাবি করে ইয়াহিয়া ফিশারিজ প্রা. কোম্পানির পক্ষে দেওয়ান ইয়াহিয়া রাজা একটি স্বত্ব মামলা করে। ১৯৭৩ সালে সিলেট সাব-জজ আদালত তার পক্ষে রায় দেন। ১৯৯২ সালে সিলেট জেলা প্রশাসন রিভিউ মামলা করে ইয়াহিয়া রাজার নামজারি আদেশ বাতিল করে সরকারের নামে রেকর্ড পুনর্বহাল করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে ইয়াহিয়া রাজা হবিগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আবার স্বত্বজারী মামলা করেন।
২০২১ সালে দেওয়া রায়ে তিন মাসের মধ্যে মামলার বিবাদীদের নামে নামজারি করার আদেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তৎকালীন ৬ কর্মকর্তাকে ৩ মাসের সিভিল জেলে আটক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। শাস্তির ওই রায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিভিশন মোকদ্দমা এবং শুটকী নদী সরকারিভাবে ইজারা দেওয়ার বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া ফিশারিজের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন মামলা এখনো চলমান।
তারা আরও বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নদনদীর তালিকায় শুটকী নদীর নাম রয়েছে। কিন্তু দখলকৃত নদীর তালিকায় ওই নদীর নাম নেই। দখলদারের তালিকায়ও ইয়াহিয়া ফিশারিজ বা এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান আহমদ রাজার নাম নেই। অথচ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেওয়ান আহমদ রাজা বংশানুক্রমে শুটকী নদীর মালিক দাবি করে থাকেন এবং নদীটিকে খাল হিসাবে দাবি করে এটি তাদের পূর্বপুরুষরা খনন করেছেন মর্মে বিবৃতি দিয়ে থাকেন।