রংপুর দিনাজপুর পঞ্চগড়ে টানা বর্ষণ
পানিবন্দি শত শত পরিবার বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ
মিঠাপুকুরে রাস্তা ভেঙে ১০ গ্রামের মানুষের চলাচল বিঘ্নিত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা না মিললেও আশ্বিনের শুরুতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব অঞ্চলে গত ২ দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। চরম দুর্ভোগ ও বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। যুগান্তরের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রংপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ৮৩১ মিমি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের সড়কের উপর দিয়ে দেড় থেকে দুই ফুট পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় পানি বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করেছে। চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। এ পরিস্থিতিতে এখনো সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষে পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
রংপুর অঞ্চলের নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের গ্রামসহ বাঁধসংলগ্ন গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন গ্রামসহ চরের গ্রামগুলো ডুবে গেছে।
রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, করতোয়া, দুধকুমার, ঘাঘট, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদনদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বৃষ্টি জমে ও শ্যামাসুন্দরীর পানি উপচে নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যান চলাচলে ব্যাঘাতসহ পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি, কোলকোন্দ, গজঘণ্টা, মর্নেয়া, আলমবিদিতর, নোহালী, কাউনিয়ার হারাগাছ, সারাই, বালাপাড়া, টেপামধুপুর, পীরগাছার তাম্বুলপুর, পীরগঞ্জের টুকুরিয়া, চতরা, কাবিলপুর, মাদারগঞ্জ, মিঠাপুকুরের বালুয়া, ছড়ান, মিলনপুর, ভাংনীসহ এ বিভাগের কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, কচাকাটা, সদর, লালমনিরহাটের তিস্তা, সদর উপজেলা, আদিতমারি, কালীগঞ্জ, কাকিনা, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, নীলফামারীর ডিমলা, ডোমার, জলঢাকা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ি, সাঘাটা, সদর, নলডাঙ্গাসহ রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।
রংপুর নগরীর বাহারকাছনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন (৫৫) জানান তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বৃষ্টির কারণে দোকানে বেচাকেনা নেই। বীরচরণ মহল্লার কৃষক সফিকুল ইসলাম (৫৩) জানান, বৃষ্টিতে ধানের বেশ উপকার হয়েছে। বৃষ্টির পানি পাওয়ায় সার ও সেচ কিছুটা কম লাগবে। আশ্বিনের এই বৃষ্টি কৃষকের উপকারে আসবে বলে জানান তিনি।
মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর গ্রাম সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। এ গ্রামের সবজি চাষি জয়নাল আবেদিন (৪০) জানান, বৃষ্টির পানি বেশিক্ষণ সবজি খেতে থাকলে সবজি গাছ মরে যাবে। ফলে তারা উৎকণ্ঠায় আছেন।
এদিকে, মিঠাপুকুরে বৃষ্টির পানির চাপে রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বজ পাতে দুখু মাহাতো (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
দিনাজপুর : দিনাজপুরে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হলেও গত দুদিনের বিরামহীন ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এসব পরিবারের বাড়িঘর। বর্ষণ আর উজানের ঢলে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
দিনাজপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের হীরাহার এলাকা ও শান্তিনগর এলাকায় রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার অন্তত ৪শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের বাড়িঘর কোমরপানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা।
খবর পেয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহম্মেদ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোববার দুপুরে দিনাজপুর পৌরসভার হীরাহার এলাকায় গিয়ে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এসময় জেলা প্রশাসক জানান, ইতোমধ্যে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে।
পৌর এলাকার বালুয়াডাঙ্গা, বালুবাড়ী, উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বিরলে বন্যায় রাস্তাঘাট ডুবে একাকার হয়েছে। মাঠের ফসল ও পুকুরের মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পৌর এলাকার অনেক স্থান প্লাবিত হয়। দিনাজপুর-বিরল (স্থলবন্দর) সড়কের তেঁতুলতলা অংশে রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
পঞ্চগড় : জেলার তেঁতুলিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ মিমি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো জেলা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি অনেকেই। বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে যেতে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে দেখা যায়।
রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত : চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার নগরীতে মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি হয়। এতে রাজশাহী শহরের নিচু এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিকাল ৪টার দিকে নামে ঝুম বৃষ্টি। মেঘের গর্জন আর বজাতের মধ্য দিয়ে একটানা সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। এই সময়ের মধ্যে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির পর নগরীর বর্ণালি মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান সড়কটিতে হাঁটুসমান পানি জমেছে। বর্ণালি মোড় থেকে সাহেববাজারের দিকে নেমে যাওয়া রাস্তাটিতে কোমর পানি জমে ছিল। বর্ণালি মোড় থেকে কাদিরগঞ্জ হয়ে দড়িখড়বোনা-রেলগেট সড়কেও হাঁটুসমান পানি জমে ছিল।
এছাড়া নগরীর লক্ষ্মীপুর, উপশহর, ভদ্রাসহ মূল শহরের বাইরের এলাকাগুলোতেও পানি জমে গেছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।