Logo
Logo
×

শেষ পাতা

থানা-ওয়ার্ড কমিটির অনিশ্চয়তায় ক্ষোভ-হতাশা

ভোটের আগে ঢাকাতেই অগোছাল আ.লীগ

মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কোনো থানা-ওয়ার্ডেই কমিটি নেই * ‘নেতাদের মতানৈক্য’র কারণে এ অবস্থা

হাসিবুল হাসান

হাসিবুল হাসান

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভোটের আগে ঢাকাতেই অগোছাল আ.লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। রাজনীতির মাঠ দখলের খেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয় রাজধানী ঢাকাকে। দুদলই তাই ঢাকাকে প্রাধান্য দিয়েই নিজেদের কর্মসূচি পালন করছে। ঘোষিত নতুন কর্মসূচিতেও স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব পেয়েছে ঢাকা।

অথচ সেই ঢাকার তৃণমূল আওয়ামী লীগই এখন অগোছাল। ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণের কোনো থানা-ওয়ার্ডেই কমিটি নেই ক্ষমতাসীনদের। গত বছর ১৩৯টি ওয়ার্ড ও ৫০টি থানা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সব সম্মেলনই ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণ হলেও ‘প্রভাবশালী নেতাদের মতানৈক্য’ কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন তো দূরের কথা, দুই সদস্যবিশিষ্ট (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) কমিটিও হয়নি। 

আরও পড়ুন ভিসানীতি নিয়ে বিতর্কে আ.লীগ-বিএনপি

বিষয়টি নিয়ে একাধিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও। নগরের শীর্ষ নেতাদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে বেশ কয়েকবার আলটিমেটামও দিয়েছিলেন। তবুও শেষ হয়নি কমিটি গঠনের কাজ। দ্রুত কমিটি ঘোষণা করতে এবং যোগ্য নেতৃত্বকে পদে আনতে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক ও লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানকে দেওয়া হয় দেখভালের দায়িত্ব। তারপরও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ কমিটি ঘোষণা হবে কিনা সেই অনিশ্চয়তা কাটছে না। এ নিয়ে নগর নেতারাও রয়েছেন অন্ধকারে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা এখন আমাদের কর্মসূচি নিয়েই বেশি ব্যস্ত। ফলে আমরা নতুন করে ওই চিন্তাটা (থানা-ওয়ার্ড কমিটি) করতে পারছি না। সে কারণে আমার ধারণা এ মেয়াদে (আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে) হয়তো আর থানা-ওয়ার্ড কমিটি হবে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থানা-ওয়ার্ডে কমিটি না হলে মাঠের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। তবে কমিটিগুলো হলে আরও ভালো হতো। কিন্তু আমরা তো সেটা করতে পারিনি।

একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি যুগান্তরকে বলেন, আমরা অনেক আগেই খসড়া কমিটি প্রস্তুত করেছি। এখন দলের পক্ষ থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে সেভাবেই করা হবে। তিনি আরও বলেন-আমরা বলেছি, যারা আগে থানা-ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন, তারা চলতি দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু নতুন কমিটিগুলো হয়ে গেলে আরও ভালো হতো। এটা হলে নেতাকর্মীদের মাঝে আরও গতি আসবে। সংগঠনও আরও সুসংগঠিত হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, আমরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে আমাদের (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ) কাছে যেসব তথ্য ছিল তা ড. আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের কাছে দিয়ে দিয়েছি। এখন উনি যাচাই-বাছাই করে এবং আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে থানা-ওয়ার্ড সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন বেশ কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে প্রতিটি সম্মেলনই জাঁকজকমপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সম্মেলনের পরে আমাদের আর কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। শীর্ষ নেতারা তাদের নিজেদের মতো করে কমিটি করতে চান। এছাড়া আরও দু-চারজন প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিও চান কমিটি নিজের মতো করে করতে। তাদের মতানৈক্যের কারণেই কমিটি গঠনে দেরি হচ্ছে দাবি করে তারা বলেন, কিন্তু এর দায় পড়ছে আমাদের (নগর কমিটি) সবার ওপর। 

এদিকে সম্মেলনের পর দীর্ঘদিনেও থানা-ওয়ার্ড কমিটি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ পদপ্রত্যাশীরা। বেশ কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতা যুগান্তরকে জানান, নির্বাচনের বেশি সময় বাকি নেই। এই সময়ের মধ্যেই কমিটি দিতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ নির্বাচনে কার নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকরা কাজ করবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। নেতৃত্ব দেওয়াকে কেন্দ্র করেও নেতায় নেতায় বিভক্তি দেখা দেবে। কারণ পদপ্রত্যাশী সবাই মনে করছেন তিনিই শীর্ষ পদ পাবেন। যার প্রভাব পুরোপুরি নির্বাচনের মাঠে পড়তে পারে। 

তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে কমিটি দিলে তার প্রতিক্রিয়া কি হবে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। নগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন একটি সূত্র জানায়, ভোটের বাকি আর মাত্র ৩ মাস। নির্বাচনের আগে কমিটি দিলে নির্বাচনে এর কি প্রভাব পড়বে তা নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। কারণ অনেকেই পদ-প্রত্যাশী রয়েছেন, কমিটি দিলে বাকিরা হতাশ বা সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ হারাবেন কিনা সেটাও ভাবা হচ্ছে। তবে তারা কমিটি গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এদিকে থানা-ওয়ার্ডে কমিটি হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের কমিটির নেতারাই চলতি দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সভাকক্ষে প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এ বিষয়ে বলেন, থানা-ওয়ার্ডের কমিটি হোক বা না হোক, যারা আগে যে দায়িত্বে ছিলেন, তারা আপাতত সেই দায়িত্ব পালন করবেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম