Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাইবার সিকিউরিটি আইন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে করা হয়েছে: জিএম কাদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাইবার সিকিউরিটি আইন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে করা হয়েছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বাকস্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হলে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। সাইবার সিকিউরিটি আইনে যে কোনো সংবাদকেই সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসাবে গণ্য করতে পারবে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করতে পারবে সাইবার সিকিউরিটি আইনে। এখন গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপ চলছে, আগামীতে কোনো সেন্সর দরকার হবে না। কারণ গণমাধ্যম কোনো সংবাদই করতে পারবে না। এতে সব নিউজ চ্যানেল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতে। নিউজের পরিবর্তে টেলিভিশনে গান-বাজনা ও নাটক চলবে। কেউই আর সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের অভাব। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশ নেই। দেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে সরকার যে কোনো কাজকেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে পারবে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণই দেশের মালিক। জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করে। মালিক হিসাবে জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারে, তাহলে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করলে তা ঠেকানোর উপায় কী? জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারে সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না।

বৃহস্পতিবার পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পেশাজীবী সমাজের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকারের সমালোচনাকে এখন রাষ্ট্রবিরোধী হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা কখনোই এক নয়। আইন করে যদি কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয় তখন আর গণতন্ত্র থাকে না।

জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। দুটি পক্ষ যেভাবে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে সহিংসতার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একটি দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা জিততে না পারলে যেন তাদের মৃত্যু হবে। তাই তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। আবার ক্ষমতায় না থাকতে পারলে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের দুর্গতি হবে এই ভেবে সরকারি দল ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দুটি দল মুখোমুখি হলেই বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে। দেশ ও জাতি ধ্বংসের পথে চলে যেতে পারে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। জেদ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশকে ধ্বংস করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্র, সরকার এবং দল যখন এক হয়ে যায় তখনই একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি দলের পক্ষে কথা বলছে। তারা সরকারি দলের সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। সরকারকে ভোটের ব্যাপারে সাহায্য করছে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই, সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতাকর্মী এবং মন্ত্রীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সরকার ও সরকারি দল এক হয়ে রাষ্ট্রকে দখল করার মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। তাই সামনের দিকে কঠিন সংগ্রাম অপেক্ষা করছে, আমাদের সেই সংগ্রামে জিততে হবে। আমরা কারো পক্ষ বা বিপক্ষ নই, আমরা জনগণের পক্ষের শক্তি।

পেশাজীবীদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, পেশাজীবীরা দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। রাজনীতিতে এলে দক্ষ কারিগর হিসাবে দেশের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয়করণের মাধ্যমে পেশাজীবীদের রাজনীতিতে এনে লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করছে। তারা পেশার দিকে খেয়াল না করে দলীয় কাজকর্মে বেশি মনোনিবেশ করছেন। ফলে সাধারণ মানুষ পেশাজীবীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না।

পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে সৃষ্টি করে প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জাতীয় পেশাজীবী সমাজ দলীয়করণের বিরুদ্ধে কাজ করবে। পদ নেই তার পরও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢালাওভাবে পদোন্নতি দেওয়া মানে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। গাইডলাইনের বাইরে পদোন্নতি দেওয়া হলে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দেবে।

সভায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাটানিতেই প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে। দল দুটি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। একটি দল ক্ষমতায় যেতে চায় আর অপরটি ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের চিন্তা শুধু ক্ষমতা নিয়েই। দেশের জনগণের কথা তারা ভাবে না। জাতীয় পার্টিই জনগণের জন্য রাজনীতি করছে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পেশাজীবী সমাজের সভাপতি ডা. মোস্তাফিকুর রহমান আকাশের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন খান, দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম