Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অস্থিতিশীল চবিতে কোণঠাসা প্রশাসন

বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে

Icon

রোকনুজ্জামান, চবি

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অস্থিতিশীল চবিতে কোণঠাসা প্রশাসন

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণ, উপাচার্যের বাসভবন-পরিবহণে ব্যাপক ভাঙচুরে মামলাসহ নানা কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িছে এবং প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অদক্ষতার কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বর্তমানে কোণঠাসা অবস্থায় আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনে বদল ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক যুগান্তরকে বলেন, ২৮ আগস্ট চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগের এক নেতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরের জেরে প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এ ধরনের বিষয়গুলোতে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও মনে করেন এ অধ্যাপক।

শাটল ট্রেন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহণ দপ্তরে ব্যাপক ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় শনিবার হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার চবি শিক্ষক সমিতির নেতারা বিবৃতিতে বলেন, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শাটল ট্রেন সংস্কারসংক্রান্ত দাবি-দাওয়া পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চবি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ৩১ আগস্ট সব ধরনের নির্মাণ ও মেরামতের কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের সমিতি। এর আগে ছাত্রলীগ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের সুপারিশ না করায় ২৩ জানুয়ারি আরেক নিয়োগপ্রার্থীকে মারধর ও ৩০ জানুয়ারি উপাচার্য দপ্তর ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া চলতি বছরে অন্তত সাতবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপ। এ সব ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি চবি প্রশাসন।

১২ ও ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ বিভিন্ন পদ থেকে ১৯ শিক্ষক পদত্যাগ করেন। উপাচার্যের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে একসঙ্গে এত শিক্ষকের পদত্যাগের ফলে বেকায়দায় পড়ে প্রশাসন। সংকট কাটাতে এসব পদে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ শিক্ষকদের পদায়ন করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এসব অদক্ষ শিক্ষক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় বর্তমান প্রশাসনে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কিছু পদ, অনুষদের ডিনসমূহ ও শিক্ষক সমিতির কমিটিসহ বিভিন্ন পর্ষদে শিক্ষকদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসব পর্ষদের সম্প্রতি নির্বাচনে প্রশাসনপন্থিদের ভরাডুবি হয়। ফলে আর কোনো নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের অনীহা দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগসংক্রান্ত অডিও কেলেংকারির ব্যাপারে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ছিল মামলা করার। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী যুক্ত ছিলেন।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সামাধান করা যায়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে।

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান প্রশাসন যোগ্যদের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছে না অথবা প্রশাসন এমনভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে, যোগ্য লোকগুলো প্রশাসনকে সাহায্য করতে চাইছে না।

প্রক্টর ড. নুরুল আজিম শিকদার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন তারা সবাই দায়িত্বশীল। এতকিছুর পরও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক রেখেছি। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে ফোন করলে তিনি কেটে দেন।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম