Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও ঢাকায় ম্যাক্রোঁ

নির্বাচনের আগে দুই সফর নিয়ে আলোড়ন

জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ সম্মানজনক : সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির * ম্যাক্রোঁর সফরে বাণিজ্যিক স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে

Icon

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনের আগে দুই সফর নিয়ে আলোড়ন

নির্বাচনের আগে শীর্ষ পর্যায়ের দুটি সফর নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে কৌতূহল আগেই ছিল। সেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর। এই দুটি সফরের রাজনৈতিক বার্তা কী সেটা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই দুটি সফর তাৎপর্যপূর্ণ। জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণকে সম্মানজনক বলছেন বিশ্লেষকরা। অপরদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বাংলাদেশ সফরে যদিও বাণিজ্যিক স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে; তদুপরি এই সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয়ে আরও জোরদার হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে ভিসানীতি প্রয়োগ করার পর বর্তমান সরকারের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের কঠোর মনোভাব বিরাজ করছে বলে অনেকে মনে করেছিলেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একের পর এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। অনেকে এটাকে বাংলাদেশের ওপর বাইডেন প্রশাসনের মাত্রাতিরিক্ত চাপ বলে অভিহিত করেছিলেন।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘দুইটা ভিজিটের দুইটা উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনা একটি বহুপক্ষীয় বিষয়। এ সুযোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে খুব বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ ছিল না। তবে দুই নেতার একান্ত আলোচনায় ভারত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকুক সেটাই চাইবে এটা স্বাভাবিক। বহুপক্ষীয় জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ সম্মানজনক।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যে সেলফি তুলেছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটার বিষয়ে যদিও আমাদের দেশে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে; তবে এটার প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই বলে মনে করি। আমার ধারণা, এটা নীতিগত অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনবে না।’ ম্যাক্রোঁর সফর সম্পর্কে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ফ্রান্সের আগ্রহই বেশি ছিল। তারা নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখেছে। পাশাপাশি, ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। নতুন করে গতি লাভ করবে। তবে এই সফরে বাণিজ্যিক স্বার্থের বিষয়ই প্রাধান্য পেয়েছে।’

এদিকে, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার মার্কিন কংগ্রেসে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। তার অংশ হিসাবে সম্প্রতি কংগ্রেসে বাংলাদেশের বন্ধুদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ককাসকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সমালোচনা করে বিবৃতি দেওয়ার পর সরকার তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এতদিন সরকার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেও এখন কংগ্রেসেও তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।

মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরিজসহ উভয় পার্টির অন্তত ১৬ জন সিনেটর-কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। শেখ হাসিনার আমলে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কে কংগ্রেস সদস্যদের অবহিত করেন। এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যু, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, শ্রম সমস্যা, বাণিজ্য সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যার মতো দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের অন্যান্য ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্যাপিটল হিলে এসব বৈঠকে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি তুলে ধরেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন একজন কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মে পররাষ্ট্র দপ্তর কোনো নীতি গ্রহণ করে না। পররাষ্ট্র দপ্তর নীতির বাস্তবায়ন করে। নীতি গ্রহণ করে কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেসের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকারের যোগাযোগ পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সীমিত ছিল। কিন্তু র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পূর্বে কংগ্রেসম্যানরা বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেই বিবৃতি র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে নিশ্চিত করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী মহল মার্কিন কংগ্রেসে লবিং বৃদ্ধি করায় সরকার সম্ভবত নতুন তৎপরতা শুরু করে।’ এদিকে, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাস্যোজ্জ্বল সেলফিতে সরকারের মহলে স্বস্তিভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথাও বলেনি। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন করাটাই তাদের প্রত্যাশা। মার্কিন কংগ্রেসম্যানরাও একই কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে একান্তে আলোচনা এবং সেলফি এটাই প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে; বাস্তবতা তার থেকে ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।’

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এখন পর্যন্ত অনেক মার্কিন ব্যক্তি বাংলাদেশ সফর করেছেন। আগামীতে বাণিজ্য বিষয়ক নিয়মিত সংলাপ টিকফা এবং অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল আগেই বাংলাদেশ সফর করেছে।

কংগ্রেসে সরকারের সক্রিয় তৎপরতার কারণে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশ ককাসে যোগ দিয়েছেন। ককাসের চার কো-চেয়ার ক্লাউডিয়া টেনি (রিপাবলিকান-নিউইয়র্ক), গেরি কনঅলি (ডেমোক্র্যাট-ভার্জিনিয়া), ডোয়াইট ইভান্স (ডেমাক্র্যাট-পেনসালভিয়া) ও জো উইলসনের (রিপাবলিকান-সাউথ ক্যারোলিনা) সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন ইমরান।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল হান্নান যুগান্তরকে বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁর সফর একটি যুগান্তকারী সফর। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এবং নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনের মাত্র ২-৩ মাস আগে ইউরোপের প্রভাবশালী নেতার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আস্থা বেড়েছে। ফ্রান্স জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। ম্যাক্রোঁর সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বিশ্বে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করেছেন।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম