স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দুটি ওয়ার্ডে
বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ডেমরার নিম্নাঞ্চল
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চলমান বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে রাজধানীর ডেমরার নিম্নাঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ সড়কে জমছে পানি। এর ফলে অধিবাসীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়াও ডিএসসিসির পাইপ ড্রেনে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করার সময় শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে পরিষ্কারের কাজ শেষ করেনি।
এতে বৃষ্টি হলেই ওই দুটি ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কে ড্রেনের পানি উপচে নিচু বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করে। আর যথাসময়ে পাইপ ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় চলমান বর্ষায় ওয়ার্ড দুটির নিম্নাঞ্চলগুলোতে স্থায়ীভাবে পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এদিকে ওয়ার্ড দুটিতে অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট থাকায় রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে ড্রেনের ম্যানহোলের লোহার ঢাকনা। এতে সড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহন ও রিকশাসহ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কবাতি নষ্টের কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন নিরিবিলি এলাকাগুলোতে প্রায় রাতেই ঘটছে চুরি-ছিনতাই। কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এছাড়া রাতের আঁধারে উল্লিখিত ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ খালে খুন হওয়া অটোরিকশা চালকের লাশ ফেলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ডেমরার সাবেক সারুলিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকা হচ্ছে ডিএসসিসির ৬৬নং ওয়ার্ড। ডেমরা থানাধীন ডগাইর (পূর্ব) পুরোনো (৭নং ওয়ার্ড অংশ), বামৈল, ডগাইর (পূর্ব) পুরোনো (৮নং ওয়ার্ড অংশ) ও ডগাইর পশ্চিমপাড়া নিয়ে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত হয়েছে। এখানে দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার।
৬৭ নম্বর ওয়ার্ডটিও সাবেক সারুলিয়া ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৪নং ওয়ার্ড এলাকা। শুকুরসী জোকা, সান্দিরা জোকা তিতাস কলোনি, সান্দিরা জোকা মৌজার অংশ (পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর ও করিম কলোনি), সারুলিয়া টেংরা (দক্ষিণ, পশ্চিম ও বাহির টেংরা) নিয়ে ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এখানে ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। আর ভোটার রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার। ওই ওয়ার্ড দুটি ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনভুক্ত এলাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসির অন্যান্য ওয়ার্ডের সঙ্গে ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কের পাইপ ড্রেনে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য টেন্ডার হওয়ার পর এখানে কাজ শুরু হয় গত এপ্রিলে। আর নামমাত্র লোকবল নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় পাইপ ড্রেন পরিষ্কারের কাজ। জুন মাসের মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করার কথা থাকলেও তা অসম্পূর্ণ রেখে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাকিব এন্টারপ্রাইজ ও শাহারা করপোরেশন বিডি। এর ফলে ড্রেনগুলোতে দিন দিন আবর্জনা জমে শক্ত হয়ে যাচ্ছে বলে একটা সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অধিবাসীরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশনসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বক্সনগর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফিরোজ আলম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি উপচে নিচু বাড়িতে প্রবেশ করে। আমার ৩টি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া এর মধ্যে চলে গেছে। সব অধিবাসীর একই সমস্যা। কাউন্সিলর অফিসে জানিয়ে কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।
ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লিটু আনাম যুগান্তরকে বলেন, ড্রেন সমস্যা ও সড়কবাতি সমস্যাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমরা। রাতের আঁধারে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছে অনেক লোক। ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় রিকশা উল্টে পড়েছে অনেক মানুষ। সড়কবাতি ঠিক করতে বারবার কাউন্সিলর অফিসে জানালেও কোনো কাজ হয় না। নিজেরাই রড ঝালাই দিয়ে ঢাকনার বিকল্প তৈরি করে নিচ্ছি। আমরা দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান চাই।
এসব বিষয়ে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ যুগান্তরকে বলেন, ড্রেনের ম্যানহোলের ঢাকনার চাহিদা ডিএসসিসিতে দুই দফায় জমা দিয়েছি। সড়কবাতি নষ্ট থাকার কারণে ঢাকনা চুরি হচ্ছে বেশি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় আমরা বিপদে আছি। চলমান বর্ষায় নিম্নাঞ্চলগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা হবে বলে আশঙ্কা করছি। দ্রুত সমাধান হচ্ছে না বলে ওয়ার্ডবাসীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।
ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইবরাহিম যুগান্তরকে বলেন, ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি ও সড়কবাতি নষ্ট হওয়ার সমস্যা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এসব বিষয়ে সমাধান চেয়ে অবগত করেছি।
ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিউল্লাহ সিদ্দিক মোবাইল ফোনে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সুযোগ নেই ড্রেন পরিষ্কার না করার। যতক্ষণ পর্যন্ত না স্থানীয় কাউন্সিলররা কাজ বুঝে পেয়ে প্রত্যয়ন দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের বিল ও জামানত ফেরত পাবে না। আর সড়কবাতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।