যশোর শিক্ষা বোর্ড
পরীক্ষার্থীর সর্বনাশ পরীক্ষকের ভুলে
লঘু শাস্তিতে পার পেয়ে যান অভিযুক্তরা * এ বছর এসএসসিতে পুনঃনিরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক ফল পরিবর্তন
ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি সূচনা গাইন। রসায়নে ৭৯ নম্বর পাওয়ায় তার কাঙ্ক্ষিত ফল হয়নি। উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করে পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাতেও ফল পরিবর্তন হয়নি। তবে এই ফল মেনে নিতে নারাজ সূচনা গাইন। তাই বুধবার মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থেকে যশোর শিক্ষা বোর্ডে এসেছিলেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, এখন আর কিছুই করার নেই। এটাই মেনে নিতে হবে।
শুধু সূচনা গাইনই নয়, তার মতো আরও অনেকের কাঙ্ক্ষিত ফল হয়নি। পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ফল। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করে।
এছাড়া এমন অনেকেই আছে, যারা আবেদন না করে নিয়তি হিসাবেই ফল মেনে নেয়। সম্প্রতি পরীক্ষকদের ভুলের পরিমাণ বাড়ছে। যাদের ভুলে একজন শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়ে যায়। সেই অভিযুক্ত পরীক্ষকরা লঘু শাস্তিতেই পার পেয়ে যান। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
যশোর শিক্ষা বোর্ড চত্বরে কথা হয় কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, খাতা বণ্টনের সময় প্রধান পরীক্ষক নির্দেশনা দিয়েই দেন মার্জিনাল নম্বর (যেমন, ৫৯, ৬৯, ৭৯) রাখা যাবে না। তাকে পরবর্তী গ্রেডের পূর্ণ নম্বর দিতে হবে। সর্বোচ্চ ৩ নম্বর পর্যন্ত গ্রেস দেওয়া যায়। এক নম্বরের জন্য যদি কারও গ্রেড পরিবর্তন হয়, সেটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে পরীক্ষককে আরও সচেতন হওয়া উচিত। কারণ, একটি ভুলের কারণে কারও অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ বলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষকের অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পেলে তাকে এক বছরের জন্য রিপোর্টেড করা হয়। শাস্তিস্বরূপ এক বছরের জন্য উত্তরপত্র মূল্যায়ন থেকে বিরত রাখা হয়। ২০২২ সালের এসএসসির উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুলত্রুটি কিংবা অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় ১২৩ পরীক্ষককে এবার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়নি। চলতি বছরও যারা উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবহেলা কিংবা ভুলত্রুটি করেছেন, তাদেরও শনাক্তের কাজ চলছে।
জানা যায়, যশোর শিক্ষা বোর্ডে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের ফল ২৮ জুলাই প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলে আপত্তি ও প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় চ্যালেঞ্জ করে ৪৩ হাজার ৯৬২ জন পরীক্ষার্থী। সোমবার প্রকাশিত পুনঃনিরীক্ষার ফলে দেখা যায়, ২৭৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে, যা একটি রেকর্ড। তাদের মধ্যে অকৃতকার্য হওয়া ৫৯ পরীক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ২০২২ সালে এসএসসি ফল প্রকাশের পর ৬ হাজার ৮৬৩ জন পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করে। এতে ৬০ জনের ফল পরিবর্তন হয়।
একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক বলেন, পরীক্ষক মূল্যায়নের পরও প্রধান পরীক্ষক ও নিরীক্ষক উত্তরপত্র যাচাই করেন। এরপরও বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে ভুল থেকে যায়। উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষকদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। এক্ষেত্রে তারা পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে যশোর শিক্ষা বোর্ডে আসা অভিভাবক অশোক কুমার গাইন বলেন, আমার মেয়ে রসায়নে এক নম্বরের জন্য ‘এ’ প্লাস পায়নি। পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেও লাভ হয়নি। সে কোনোভাবেই এই ফল মেনে নিতে পারছে না। এজন্য বোর্ডে এসেছিলাম এ বিষয়ে আর কোনো আপিলের সুযোগ আছে কি না। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আর কিছুই করার নেই। এই ফল মেনে নিতে হবে।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা সৈকত আহমেদ বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। ফল প্রকাশের পর দেখি, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছি। কিন্তু পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম। ফেল করার কথা নয়। পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছিলাম। ফল পরিবর্তন হয়নি। এক বছর জীবন থেকে ঝরে গেল।