১২১ ঝুঁকিপূর্ণ কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে
যে কোনো সময় ঘটতে পারে বিস্ফোরণ * নিয়মিত নিলাম না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে কনটেইনার জট
সাদ্দাম হোসেন ইমরান
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক বোঝাই ১২১টি কনটেইনার পড়ে আছে। এসব কনটেইনারে রয়েছে-লবণ, সার, এসিড, কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য। যে কোনো সময় এসব কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও বন্দরে নিলামযোগ্য ৬ হাজার ৬৭৭টি কনটেইনার পড়ে আছে, যা বন্দরের ধারণক্ষমতার ১২ শতাংশ দখল করে রেখেছে। নিয়মিত নিলাম না হওয়ার কারণে বন্দরে কনটেইনার জট সৃষ্টি হচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১৫ জুলাই বন্দরের ২নং গেটের ৩নং শেড ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ভস্মীভূত হয়। বর্তমানে বন্দরের প্রতিটি শেডেই নিলামযোগ্য ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা স্তিমিত হয়ে পড়ায় একই রকম ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
বর্তমানে বন্দরের বিভিন্ন শেডে ২০-৩০ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কনটেইনার বোঝাই রাসায়নিক পড়ে আছে। এর মধ্যে ১২ টন ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ৬৮০ ব্যাগ ফিনিশিং এজেন্ট, ২২০ ব্যাগ ফিনিশিং কেমিক্যাল, ২ হাজার ব্যাগ কস্টিক সোডা, ৪০০ ব্যাগ সোডা, ৪ টন জুস, ৭ টন লাইট পার্টস, ৬০ ড্রাম কেমিক্যাল, ১০ টন ফিনিশিং এজেন্ট, এক লট পলিথিন গ্লাইকল, এক প্লেট ফটো পলিমার, এক লট ফার্টিলাইজার, ৩ টন সোডিয়াম বেনটোনাইট, এক টন অ্যামোনিয়াম সল্যুশন ইত্যাদি।
নতুন অকশন শেডে পড়ে আছে-৫ হাজার ৩৪১ টন গর্জন কাঠ, ৬৫০ টন সেডিয়াম সালফেট, ৩৭ ড্রাম স্লাজ ওয়েল, ৬ হাজার লিটার ফর্মালডিহাইড্রেট সল্যুশন, ১৪২ জার কেমিক্যাল, ৫৫ জেরিক্যান ইলেকট্রোলাইট সালফিউরিক এসিড, ৩ গাড়ি ফেনল ও ফসফরিক এসিড ইত্যাদি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, কয়েক মাস পরপর কাস্টমসে চিঠি দিয়ে কনটেইনারের সর্বশেষ তথ্য দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা কনটেইনারবোঝাই পণ্য নিলাম এবং ঝুঁকিপূর্ণ কনটেইনার বা পণ্য অপসারণে কাস্টমস তাদের মতো কাজ করছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, ১২১টি কনটেইনারের মধ্যে এসিড ও কেমিক্যাল বোঝাই ৫৪টি কনটেইনার সিলেটের ছাতকের লাফার্জ হোলসিমের জিও সাইকেল প্ল্যান্টে ধ্বংস করা হবে। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ধ্বংস কার্যক্রমের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে।
গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে রাসায়নিক পণ্য অপসারণে ধীরগতির পেছনে কাস্টমসকে দায়ী করে। চিঠিতে বলা হয়, নিলামের জন্য পণ্য শুল্ক বিভাগকে হস্তান্তর করা হলেও বাস্তবে নিলামযোগ্য পণ্য বন্দর অভ্যন্তরে থেকে যায়। এতে বন্দরে পণ্যজট সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিক অপারেশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব পণ্যের মধ্যে বিপজ্জনক পণ্য ও পণ্যবাহী কনটেইনারও রয়েছে। চিঠিতে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৪-৫টি ই-অকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপজ্জনক পণ্যের নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করতে এনবিআরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
তিন সুপারিশ : প্রতিবেদনে অগ্নি ঝুঁকি হ্রাসে ৩টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-নিলাম অযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অন্য ধ্বংসযোগ্য পণ্য বিনষ্ট করতে গঠিত কমিটির কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করতে পারে। কাস্টমসের নিলাম শাখায় জনবল বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়। এ লক্ষ্যে নিলাম শাখায় পদায়িত কর্মকর্তাদের ধ্বংস ও নিলাম কাজে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত রাখতে এনবিআর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
পাশাপাশি বন্দরের পি কেমিক্যাল শেডসহ সব শেড ও ইয়ার্ডে মেয়াদোত্তীর্ণ ধ্বংসযোগ্য রাসায়নিক পণ্য স্বল্প ব্যয়ে ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে নিয়মিতভাবে ধ্বংস করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে সুবিধাজনক স্থানে একটি জিও সাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।