Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সমালোচনায় পাপিয়া-মিশুরা

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না যুব মহিলা লীগের

সামনে আরও সতর্ক ও কঠোর হওয়ার ঘোষণা শীর্ষ নেতাদের

Icon

হাসিবুল হাসান

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না যুব মহিলা লীগের

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একঝাঁক সাবেক নেত্রীকে নিয়ে ২০০২ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা করা হয় যুব মহিলা লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠন। দলের দুঃসময়ে রাজপথে সংগঠনটির ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলও। সেই পথ থেকে যেন দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে সংগঠনটি। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নাম আসছে সংগঠনটির নেত্রীদের। হচ্ছে সমালোচনা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে মূল দল আওয়ামী লীগকেও। ক্ষুণ্ন হচ্ছে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বারবার সতর্ক করার পরও হুঁশ ফিরছে না। নির্বাচনি বছরে সহযোগী সংগঠনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালে যুব মহিলা লীগকে চরম সমলোচনায় ফেলেন শামীমা নূর পাপিয়া। সংগঠনের একটি জেলা শাখার এই শীর্ষ নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নারীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ ছিল। গ্রেফতারের পরে তাকে নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও তখন ইমেজ সংকটে পড়ে সংগঠনটি। আওয়ামী লীগ নেতারাও তখন এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রীদের কড়া ভাষায় সতর্কও করেছিলেন। তবুও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে পারেননি সংগঠনটির নেত্রীরা।

চলতি বছরের শুরুতে সুলতানা লতা শোভা নামের এক নেত্রীর মাদক সেবনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাকেও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের নেত্রী মেহেনাজ তাবাচ্ছুম মিশু। সাভারের এক স্কুলছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা, শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও তাকে পাঁচতলা ছাদ থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে মিশুকে ১৯ আগস্ট গ্রেফতার করে পুলিশ। যুব মহিলা লীগ নেত্রীর এমন কাণ্ডের সংগঠনের ভেতরে-বাইরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ফের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সংগঠনটি।

সমালোচনার মুখে মেহেনাজ তাবাচ্ছুম মিশুকে সাময়িক বহিষ্কার করে যুব মহিলা লীগ। জানা গেছে, গঠনতন্ত্র না মেনে মিশুকে ঢাকা জেলা (উত্তর) যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। এ কমিটির সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমাকে নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তিনিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তও করে এবং সত্যতাও পায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিতর্কিত এ কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন আক্তার নিপা। তিনি এই কমিটির গঠনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুব মহিলা কল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। জেসমিন আক্তার নিপা এর আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তখনও তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অবৈধ কাজ করাতে বাধ্য করা, পাশাপশি হলে মাদকের আড্ডা, সিট বাণিজ্য, প্রশ্ন ফাঁস ও ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ছিল। ২০১৪ সালে ২৪ জুন রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে ইডেন কলেজে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দিতে কমিটি স্থগিতও করা হয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে জেসমিন আক্তার নিপার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমে অভিযোগ অস্বীকার করেন নিপা।

জানা গেছে, বর্তমান পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরে সংগঠনের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার তার কমিটির ১০ জন সদস্যকে সংগঠনের সহসভাপতির পদে অন্তর্ভুক্ত করতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুব মহিলা লীগের সঙ্গে যুক্ত এমন কয়েকজন নেত্রীর অভিযোগ-সংগঠনে এখন ত্যাগীদের চেয়ে নব্য-হাইব্রিড নেত্রীদের প্রভাব বেশি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের পরে যারা রাজনীতিতে এসেছেন কমিটিতে তাদের প্রধান্য রায়েছে। এদের কারণেই পাপিয়া-মিশুদের মতো বিতর্কিতরা সংগঠনে ঢুকে পড়ে। জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, সেপ্টেম্বরে আমরা আরও কঠোর অবস্থানে যাব। যারা সংগঠনের নীতিবহির্ভূত কাজে জড়িত থাকবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে। জেসমিন আক্তার নিপা ওই কমিটি গঠনের সময় দায়িত্বে ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের আগের কমিটির সময় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মিশু ওই কমিটির এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নিপা ওই কমিটি গঠনের সময় দায়িত্বে ছিলেন কিনা তা আমি বলতে পারছি না।

একই বিষয়ে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি বলেন, জেলা কমিটিগুলো করার সময় স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের যাচাই-বাছাই করার সুযোগ হয় না, বিতর্কিতরা ঢুকে যায়। কিন্তু শেষে দায়ভার আমাদের ওপর এসে পড়ে এবং তা এড়াতেও পারি না। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন-এমন সময়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটল। আগামীতে এসব বিষয়ে আরও সতর্ক ও কঠোর অবস্থান থাকবে বলেও জানান শারমিন সুলতানা লিলি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম