চকরিয়ায় সাঈদীর জানাজা নিয়ে সংঘর্ষ
চেয়ারম্যান জামালের গাড়িতে আসেন অস্ত্রধারীরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন ফোরকানুর রহমান নামের একজন এবং আহত হন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অনেকে। সংঘর্ষের সময় ধারণ করা ভিডিও এবং স্থির চিত্রে দেখা গেছে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ-সদস্য জাফর আলমের নেতৃত্বে একটি মিছিল থেকে বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষকে লক্ষ করে গুলি করছেন। এ ঘটনার ছয় দিন পার হলেও এখনো অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। অথচ তারা স্থানীয়ভাবে পরিচিত এবং এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
অস্ত্রধারী কারা : নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষের শুরুতে বায়তুশ শরফ রোডে সাংবাদিক জসিম উদ্দিন কিশোরের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন এমপি জাফর আলমের ভাতিজা ও গেল পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াবুল হক এবং এমপির পিএস আমিন চৌধুরী। তাদের নেতৃত্বেই অস্ত্রধারীরা সেখানে অবস্থান নেয়। তাদের গুলিতেই প্রাণ হারান ফোরকান। তবে, আমিন চৌধুরীর দাবি তারা লাঠি হাতে জামায়াত-শিবিরের হামলা প্রতিহত করেছেন। অন্যদিকে এমপি জাফরের মিছিলে হেলমেট পরে গুলি ছোড়া অস্ত্রধারী যুবলীগ নেতা বেলাল বলে প্রচার করা হলেও তিনি আসলে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম সওদাগর ঘোনার বাসিন্দা আব্দুল জলিল। তিনি অস্ত্রের কারিগর ছিলেন। এখন তিনি এমপি জাফরের দেহরক্ষী হিসাবে পরিচিত। আর সাদা গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তিও একই স্থানের বাসিন্দা ইউচুপ। তিনিও এমপির ক্যাডার হিসাবে পরিচিত।
ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী। তার সঙ্গে অস্ত্র হাতে পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানকেও দেখা গেছে। গামছা মোড়ানো অস্ত্র হাতে হাঁটছিলেন এমপি জাফর আলমের ভাগিনা মিজানুর রহমান। অস্ত্র হাতে ছিলেন ডাকাত জালাল নামে আরেক ব্যক্তি। স্থানীয়রা এসব অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করতে পারলেও তাদের চিনতে পারছে না পুলিশ-এমনটাই তাদের দাবি।
অস্ত্রধারী নামেন চেয়ারম্যান জামালের গাড়িবহর থেকে : ওই দিনের ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘটনার দিন চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন চৌধুরী নিজের গাড়িতে সাতজন অস্ত্রধারীকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেন। পরে এসব অস্ত্রধারী মিছিলে যোগ দিয়ে গুলি করেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান জামাল। তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। আমি এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।
এদিকে, এমপি জাফর আলমের উপস্থিতির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সংঘর্ষ হওয়া স্থানে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির সব সিসিটিভির ফুটেজ ডিলেট করেছেন এমপির ছেলে তানভির আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। শনিবার রাতে তাদের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী প্রায় সব স্থানের সিসিটিভির ফুটেজ ডিলিট করার পাশাপাশি সন্দেহভাজন অনেককে ধরে নিয়ে যান। ভিডিও প্রচার করার সন্দেহে শনিবার রাত ১০টার দিকে চিরিঙ্গা সিটি সেন্টারস্থ শাওমি শোরুম থেকে এক কর্মচারীকে তুলে নিয়ে যান এমপির অনুসারীরা। এ ছাড়া হারবাং এলাকা থেকেও তুলে নেওয়া হয় আরও একজনকে।
এ বিষয়ে জানতে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীরকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তানভির আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন বলেন, কাউকে তুলে নেওয়া এবং সিসিটিভির ফুটেজ ডিলিটের অভিযোগ সত্য নয়। আর কেউ অভিযোগ করলে সেটা সত্য ধরে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে দিলে তো এ দেশে থাকা যাবে না। আমি এখনো ছাত্র। কয়েক দিন আগেই মালয়েশিয়া থেকে এসেছি। আমার বাবা এমপি, তাই ওনাকে সমর্থন করাটাই আমার অপরাধ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, সেদিন প্রায় দশ থেকে পনেরো হাজার জামায়াতের কর্মী গায়েবানা নামাজে অংশগ্রহণ করে। হঠাৎ তারা শহরের দিকে মিছিল সহকারে এসে ইউএনও, ওসি এবং পুলিশ সুপারের গাড়িতে হামলা চালায়। তখন আমরা প্রশাসন এবং জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ১০-১৫ জন নেতাকর্মী লাঠি হাতে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করি। মিছিলে যে লোকটি অস্ত্র হাতে ছিল তাকে আমরা চিনি না। তিনি হয়তো বা সিভিলে প্রশাসনের লোকও হতে পারেন।
চকরিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি।