সাঈদীর জানাজা ঘিরে সংঘর্ষ
অস্ত্রধারীদের মিছিলের নেতৃত্বে চকরিয়ার এমপি
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য জাফর আলম। মিছিলে জাফর আলমের সামনে-পেছনে অন্তত দুজনের হাতে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি ভিডিও ও ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংসদ-সদস্য জাফর আলম মাথায় হেলমেট, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে মিছিলে ছিলেন।
চকরিয়ার মাটি জাফর ভাইয়ের ঘাঁটি জাফর ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই-স্লোগান দিয়ে মিছিল থেকে ফাঁকা গুলি করতে দেখা গেছে। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা বেশিরভাগ লোকজনের হাতে লাঠি ছিল।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ১৫ আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে যখন চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিংগার বায়তুশ শরফ সড়কে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুটি গাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছিলেন, ঠিক এর ১৫ মিনিটের মধ্যে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন লোক নিয়ে সংসদ-সদস্য জাফর আলম চকরিয়ায় উপস্থিত হন। তার সঙ্গে সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজনকে দেখে মানুষ দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় একটি মিছিল নিয়ে জাফর আলম বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। মিছিলের সামনে ছিলেন এক অস্ত্রধারী, হাঁটতে হাঁটতে তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তার ঠিক পেছনে জাফর আলম ও আরেক অস্ত্রধারীকে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা গেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা সংসদ-সদস্য জাফরকে মাঝখানে রেখে চকরিয়া শহরের মহাসড়কে মিছিল করা হচ্ছে। মিছিলের সামনে হেলমেট পরা হাফহাতা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির হাতে ভারী অস্ত্র। এর পেছনে জাফর আলম, তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও চকরিয়া পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক জয়নাল হাজারীকে দেখা গেছে। জাফর আলম হেলমেট পরলেও আমিন চৌধুরী, আলমগীর ও জয়নাল হাজারীর মাথায় হেলমেট ছিল না। তাদের পাশে কালো পাঞ্জাবি ও হেলমেট পরা আরেকজনকে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। মিছিল এগিয়ে যেতে থাকলে একজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। এ সময় স্লোগান দেওয়া হয়, ‘চকরিয়ার মাটি জাফর ভাইয়ের ঘাঁটি’, ‘জাফর ভাইয়ের ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই।’
এমপির ঘনিষ্ঠ একজন জানান, জাফর আলম এই প্রথম অস্ত্রধারী নিয়ে রাস্তায় নামেননি। অতীতে তিনি বহুবার জামায়াত-বিএনপিকে প্রতিরোধে নিজেও অস্ত্র হাতে নেমেছেন।
একটি সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে মাঠের শক্তির জানান দিয়ে মনোয়নপ্রত্যাশী বা জাফর বিরোধীদের বার্তা দিতে চাচ্ছেন জাফর আলম। মূলত জামায়াত-বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগে জাফর বিরোধীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করাই তার মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি খুঁজে নিয়ে ভিডিও ফুটেজ ডিলেট করে দিচ্ছে জাফরের অনুসারীরা। এসব ভিডিও ফুটেজ ভুলেও প্রকাশ পেলে তাদের পরিণাম ভালো হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে কয়েকজন ব্যবসায়ী দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জাফর আলমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে, এমপির বরাত দিয়ে তার একান্ত সহকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারি নিষেধ থাকার পরও জামায়াত চকরিয়াকে পরিকল্পিতভাবে অশান্ত করতে চিরিঙ্গা লামারপাড়ায় গায়েবানা নামাজের আয়োজন করে। নামাজ শেষে তারা চকরিয়ায় ব্যাপক ভাঙচুরসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে- এমন গোপন সংবাদ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এমপির নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চকরিয়া পৌর শহরে অবস্থান করে।
আমিন আরও বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের হাতে যেসব অস্ত্রের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো লাঠি, অস্ত্র নয়।
নিহত ফোরকান আওয়ামী লীগের সমর্থক দাবি করে তিনি বলেন, জামায়াত পরিকল্পিতভাবে জল ঘোলা করার জন্য মিথ্যাচার করেছে। আমরাই নিহতের জানাজাসহ সব ধরনের কার্যক্রম করেছি। তার পরিবারকেও নগদ ১ লাখ টাকা সাহায্য করেছেন জাফর আলম। অথচ জামায়াতের কোনো ভূমিকা ছিল না।
অস্ত্রধারীদের সঙ্গে তার ও সংসদ-সদস্যের ছবি প্রসঙ্গে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, তার নেতৃত্বে গায়েবানা জানাজার দিন মহাসড়কে শান্তিমিছিল করা হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সংসদ-সদস্যও। তবে যে ছবির কথা বলা হচ্ছে, সে ছবি আর শান্তিমিছিলের ছবি এক নয়। অস্ত্রধারীদের বিষয়টি তিনি জানেন না। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে ভারী অস্ত্র হাতে এক ব্যক্তিকে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির নাম বেলাল উদ্দীন। তিনি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তবে বেলালের দাবি, হেলমেট পরা সশস্ত্র সেই ব্যক্তি তিনি নন। এমনকি ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ সংঘর্ষে ছিলেন না। জামায়াত-বিএনপি এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা তাদের চিনতে পারিনি। তবে তাদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত তাদের চিহ্নিত করতে পারব। কারা গুলি করছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমপি জাফর আলমের আলমের নেতৃত্বে মিছিলের ভিডিও আমরাও দেখেছি। ওই মিছিল থেকে গুলি হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।