মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
স্বাচিপ নেতাসহ ছয় চিকিৎসক সিআইডি হেফাজতে
খুলনাজুড়ে দিনভর আলোচনা * তালিকায় খুমেকের ১১ শিক্ষার্থী
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে খুলনার আলোচিত কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস’র উপদেষ্টা ডা. ইউনুসুজ্জামান খান তারিমকে আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার খুলনা মহানগরী থেকে তাকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আটক করে হেফাজতে নিয়েছে। এ ছাড়া পৃথকভাবে আরও পাঁচ চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজের ১১ শিক্ষার্থীর একাডেমিক তথ্যও নিয়েছে সিআইডি।
এদিকে, এতজন চিকিৎসকের আটকের ঘটনায় খুলনাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আটক তারিম স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) খুলনা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএমএ খুলনার নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আটক অন্য চিকিৎসকরা হলেন-খুমেকের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজিয়া মেহজারিন তৃষা, মুহতাসিন হাসান লামিয়া, কৃষ্ণা, শর্মিষ্ঠা সাহা, লুইস সৌরভ সরকার। তাদের মধ্যে লুইস সরকার থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ের শিক্ষক ছিলেন।
সিআইডির হাতে মেয়ের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শর্মিষ্ঠা সাহার বাবা খুলনার ডায়াবেটিক সমিতির চিকিৎসক দীনবন্ধু সাহা। এদিকে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মুহতাসিন হাসান লামিয়া ফোন কেটে দেন। তবে ডা. লুইস ও কৃষ্ণার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। কৃষ্ণার আটকের বিষয়টি জানিয়েছেন তাদের সহকর্মীরা। আর নাজিয়া মেহজাবিন তৃষার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দীন উল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জুলাইয়ে সিআইডি আমাদের কাছে ১১ শিক্ষার্থীর বিষয়ে তথ্য জানতে চিঠি দেয়। ২০১৫ সালে তারা ভর্তি হয়েছে। আমরা সিআইডির ফরম অনুযায়ী তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের মধ্যে তিনজন এমবিবিএস পাশ করেছেন।
খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম বলেন, আটক চিকিৎসকদের মধ্যে বিএমএর সদস্য রয়েছেন। তারা আটক হয়েছে কিনা পরিবার থেকে জানতে পারিনি। অভিযোগ থাকলে যে তারা দোষী হবেন-বিষয়টি এমন নয়। তবে আটকের বিষয়টি চুপিসারে না করে করলে ভালো হতো।
খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, চিকিৎসকদের আটক করেছে ঢাকা সিআইডির একটি টিম। আমরা তাদের শুধু সাপোর্ট দিয়েছি। কতজন আটক হয়েছে সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই।
পুলিশ জানায়, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার দফা প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এর সঙ্গে প্রতি বছর ডা. তারিমের আলোচিত থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের নাম উঠে আসে। ২০১৫ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর ২০১৬ সালেও ডা. তারিম চেষ্টা করেন। কয়েকজন অভিভাবকের কাছ থেকে তিনি ১০-১২ লাখ টাকা করে নেন। তবে প্রশ্ন সরবরাহ করতে না পারায় অভিভাবকরা টাকা ফেরতের দাবি করে। টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে তারিম অভিভাবকদের সঙ্গে টালবাহানা করেন। অভিভাবকরা তার বিরুদ্ধে বিষয়টি ছড়াতে থাকেন। এরপর থেকে থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রচারিত হয়।
সূত্র জানায়, তারিমের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র সরবরাহের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার ৩৫টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়। এসব ব্যাংক হিসাবে তার প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর তারিমকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডা. লুইস সৌরভ সরকারসহ আরও দুজনকে ঢাকার সিআইডি পুলিশ আটক করে। জবানবন্দিতে ডা. লুইস জানান, ২০১৫-১৬ সেশনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়া মুসতাসিন হাসান লামিয়া ডা. তারিমের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।