রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ
খালেদা জিয়ার খাবারে কিছু মেশানো নিয়ে সন্দেহ রিজভীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বেগ জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যে মহিলা স্বাভাবিকভাবে জেলখানায় গেলেন, তিনি আজ গুরুতর অসুস্থ কেন? জেলখানায় তার খাবারের মধ্যে সরকার কোনো কিছু মিশিয়েছে কি না এটা নিয়ে জনগণ আজ সন্দেহ প্রকাশ করছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৭৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা জেলা বিএনপি।
রিজভী বলেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ ক্ষমতায় রাখা এবং সরানোর দায়িত্ব জনগণের। আপনিই তো জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, যাতে জনগণ সুষ্ঠু ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারে। জনগণকে আপনি ষড়যন্ত্রের কথা বললে অট্টহাসি দেওয়া ছাড়া তাদের আর কিছুই থাকে না।
সভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন মাস্টার, আমিনুল ইসলাম, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু প্রমুখ।
অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে-মঈন খান : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। সরকার তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা দেশে একদলীয় সরকার কায়েম করেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের লেবাস পরে আছে। এরা মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের তানজিল হাসান, রিয়াদ ইকবাল, রোকনুজ্জামান রোকন, নিজাম উদ্দিন রিপন, আকতারুজ্জামান আকতার, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সালেহ মোহাম্মদ আদনান, জহিরুল ইসলাম, রিয়াদ উর রহমান প্রমুখ।
রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনের ভাসানী মিলনায়তনে সামনে থেকে শুরু হয়ে ফকিরাপুল মোড় ঘুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে লিফলেট বিতরণ শেষ হয়।
এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, সুস্থ খালেদা জিয়া হেঁটে জেলখানায় ঢুকলেন। আর অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। এটাই সরকারের নীলনকশার প্রমাণ। শতবার বলার পরও দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি সরকার। এর পেছনে সরকার কী নীলনকশা করছে তা জাতি জানতে চায়।
লিফলেট বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, লিটন মাহমুদ, আরিফা সুলতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের খন্দকার এনামুল হক এনাম প্রমুখ। একই সময় নয়াপল্টন এলাকায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বেও লিফলেট বিতরণ করা হয়।
দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি ড্যাবের : এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে আশঙ্কাজনক দাবি করে অবিলম্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়া সত্ত্বেও স্বৈরাচারী সরকার তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
আপনার অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না : ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনার অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা সেই নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছি যে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারে না। সেই নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করব না।
পুলিশের গুলিতে আহত ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিুটুকে বৃহস্পতিবার দুপুরে তার ফতুল্লার পাগলা এলাকার বাসায় দেখতে এসে একথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন, তাকে নাকি সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলি, আপনাকে তো সরাবে জনগণ। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনি যেভাবে ক্ষমতায় থাকতে চান, সেটার শিকার হচ্ছে শহীদুল ইসলাম টিটু। আপনার গণতন্ত্রে মিছিল করার, স্লোগান দেওয়ার কোনো লোক থাকবে না। আপনার গণতন্ত্র জোর করে ক্ষমতায় থাকার। আপনি শহীদুল ইসলাম টিটুর চোখের আলো কেড়ে নিয়ে জাতিকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছেন। তার এই ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই ত্যাগের বিনিময়ে সরকারের পতন হবে।
এছাড়া রুহুল কবির রিজভী কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ফতুল্লার পাগলাসহ বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য দীপু ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ।
২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথ অবরোধ কর্মসূচিতে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ওইসময় টিটুর চোখে পুলিশের ছোড়া গুলি লাগে।