Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জামায়াতি তাণ্ডবে ঢাকায় দুই মামলা

সাঈদীর ছেলেসহ আসামি পাঁচ হাজারের বেশি

চকরিয়ায় তিন মামলায় আসামি ৮২৫০ * গ্রেফতার ও আটক প্রায় একশ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাঈদীর ছেলেসহ আসামি পাঁচ হাজারের বেশি

ফাইল ছবি

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর রাজধানীতে দলটির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে পল্টন ও শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত মামলায় সাঈদীর এক ছেলেসহ আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার জনকে। এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, গোপন বৈঠক, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আরও দশটির বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলিয়ে নয় হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে একশ জনের মতো আটক ও গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর যুগান্তর প্রতিবেদক, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের।

ঢাকার শাহবাগ থানায় সরকারি কাজে বাধাদান, মারধর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন এসআই আ. জব্বার। এতে আসামি সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাইফুল ইসলামের নাম রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি হিসাবে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ১০০/১৫০ জামায়াত-শিবির কর্মী। এ মামলার বাদী পল্টন থানার এসআই সালাহ উদ্দিন কাদের। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো, সরকার উৎখাতের হীন উদ্দেশ্যে জনতাবদ্ধ হয়ে পুলিশ ও মুসল্লিদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাভোগরত জামায়াত নেতা সাঈদী সোমবার রাতে মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার মৃত্যুর পর ঢাকায় গায়েবানা জানাজার দাবিতে বিক্ষোভ করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। পরে শাহবাগ এবং পল্টনের বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ভাঙচুর চালান তারা। এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়।

শাহবাগ থানার মামলায় বলা হয়, সাঈদীর মৃত্যুর খবরে বিপুল সংখ্যক জামায়াত-শিবির কর্মী জড়ো হন। তারা উসকানিমূলক বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা শাহবাগ থেকে বাংলামোটর ও আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে বারডেম ও বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীসহ অনেকেই আটকা পড়েন। এ সময় পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে জামায়াত কর্মীরা মারমুখী আচরণ করেন। তারা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে নেওয়ার সময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা ইটের টুকরা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ককটেল ছোড়ে। পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাঁজোয়া যানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। দুটি মামলায় গ্রেফতার আসামিদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার ফরুক হোসেন রাতে যুগান্তরকে বলেন, বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতার আসামির সংখ্যা এখনই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে তথ্য প্রাপ্তির পর নিশ্চিত সংখ্যা বলা সম্ভব হবে।

চকরিয়ায় ৩ মামলা : কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। বুধবার নিহত মো. ফোরকানের স্ত্রী নুরুচ্ছফা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা, থানার এসআই মো. আল ফোরকান বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় এজাহার নামীয় ১৫০ জন ও অজ্ঞাত ৮ হাজার ১শ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় কোনো আসামি নেই।

এদিকে গুলিতে নিহত ফোরকানের জানাজা বুধবার দুপুরে সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় উপস্থিত থেকে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি জাফর আলম নিহতের পরিবারের হাতে এক লাখ টাকা নগদ সহায়তা প্রদান করেন। নিহতের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ৩ মামলা : চট্টগ্রামে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা নামাজে জানাজা আয়োজনকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। বুধবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় দুইটি ও খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করে। দুইটি মামলার প্রত্যেকটিতে জামায়াত-শিবিরের ৬৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়ায় ১৯ নেতাকর্মী গ্রেফতার : বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার প্রস্তুতি, গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে ও পূর্বের মামলায় জামায়াত শিবিরের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর ও বুধবার সকালে ছয়টি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সাঁথিয়ায় ৯ জন গ্রেফতার : পাবনার সাঁথিয়ায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের চেষ্টায় গোপন বৈঠক চলাকালে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও ৭টি ককটেল উদ্ধার করেছে। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতরে বৈঠক চলার সময় তাদের তাদের গ্রেফতার করা হয় পুলিশ জানায়।

রানীনগরে গ্রেফতার দুই : নওগাঁর রানীনগরে নাশকতা পরিকল্পনা করার অভিযোগে গোপন বৈঠক থেকে ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক নেতা ও কর্মীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার আবাদপুকুর বাজারের পাশে একটি বাগান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে।

নিয়ামতপুরে গ্রেফতার ২ : নওগাঁর নিয়ামতপুরে উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম মিনুসহ দুজনকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা থাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঈশ্বরদীতে ১১ নেতাকর্মী কারাগারে : নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে পাবনার ঈশ্বরদীতে জামায়াতের ১১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার পর তাদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

কোম্পানীগঞ্জে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ : সাঈদীর মৃত্যুতে ‘শোকাহত’ পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহীতে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় ওই ইউনিয়নের গাংচিল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল করিম (৪৫), যুবলীগ কর্মী রুবেল (২২), ছাত্রলীগ নেতা রিপন (১৮), একরাম (২০), এরশাদ (২৪), রুহুল আমিন (৪৮)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাংচিল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য যুবলীগ নেতা এরশাদ (২৪) বাজারের একটি পিলারে সাঈদীর মৃত্যুতে ‘শোকাহত’ পোস্টার লাগান। পরে শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল করিম পোস্টার খুলে ফেলেন। এতে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে বেধে যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম