Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভেড়ামারায় আ.লীগ-জাসদ দ্বন্দ্ব

মনোনয়নে বিরোধিতার মুখে পড়তে পারেন ইনু

নিহত সঞ্জয় প্রামাণিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন * যুবজোট থেকে শোভন বহিষ্কার

Icon

এএম জুবায়েদ রিপন, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মনোনয়নে বিরোধিতার মুখে পড়তে পারেন ইনু

রাজনৈতিকভাবে নানা কারণে আলোচিত কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বাড়ি এ উপজেলায়। ১৪ দলীয় জোটের শরিক হলেও এই দুদল এখন চরম দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে।

গত ৫ বছরে জাসদ নেতাকর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগের দুজন নেতা খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুদলের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। সর্বশেষ জাসদের যুবসংগঠন যুবজোট নেতাকর্মীদের হামলায় নিহত হন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক।

২ আগস্ট তাকে কোপানো হয়। বুধবার তিনি ঢাকায় মারা যান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেড়ামারা এখন উত্তপ্ত। ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জাসদ সমর্থিত কয়েকজনের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে জাসদ নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপনসহ দলটির নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা হয়।

ওই হত্যাকাণ্ডের পর জাসদ ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐক্যে ফাটল ধরে। এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করে। হত্যাকাণ্ডের জের ধরে আওয়ামী লীগের লোকজন জাসদ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালায়।

এছাড়া উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে জাসদের ভরাডুবির কারণে দ্বন্দ্বে আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে। স্থানীয় সরকারের তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাসদ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সংঘর্ষ হয় অনেকবার। মামলা হয়েছে একাধিক।

অপরদিকে ভেড়ামারার পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন জাসদ নেতা আব্দুস সালাম। গত বছরের ১১ মে সন্ধ্যায় আল্লারদরগা এলাকায় আব্দুস সালামকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এতে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর পরিবারের ৬ জনসহ ২১ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়।

এসব ঘটনায় কুষ্টিয়া-২ আসানের বর্তমান সংসদ-সদস্য হাসানুল হক ইনুকে বেকায়দায় ফেলেছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের চরম বিরোধিতার মুখে পড়তে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের ভোটে ইনু এমপি নির্বাচিত হলেও তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। উলটো তার দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম, হত্যা, নির্যাতন চালাচ্ছে।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, তিনটা নির্বাচনে ইনু সাহেবের পক্ষে মাঠে নেমে কাজ করেছি। এমপি হয়ে উনি (ইনু) আমাদের কথা ভুলে যান। উলটো আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন। এবার নির্বাচনে নেতাকর্মীরা ভোট দিলেও সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দেবেন বলে মনে হয় না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল হক বলেন, ‘জাসদ নেতাকর্মীরা এখানে অস্ত্রের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা বারবার আমাদের দলের নেতাদের ওপর হামলা করছে, মামলা দিচ্ছে। এতে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।’

২০০৮ সালের আগের প্রায় সব সংসদ নির্বাচনেই মশাল নিয়ে পরাজিত হন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এরপর মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে টানা তিনবার কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। জোটের স্বার্থে ইনুকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে ২০০৮ সালের পর তিনবারই কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনে নির্বাচন করেন মাহাবুবউল আলম হানিফ।

এ সম্পর্কে ভেড়ামারা উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী বলেন, ‘কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগত কারণে এসব ঘটতে পারে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের সম্পর্ক আগের থেকে ভালো।’

জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম স্বপন বলেন, ‘ভেড়ামারায় যত ঘটনা ঘটেছে, তা স্থানীয় ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত। এমনকি পাড়া-মহল্লার বিরোধে মারামারি-খুন হয়। এতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় থাকে না। যদিও আওয়ামী লীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রী মহল এটাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে।’

এ বিষয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ‘২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বিএনপির ধানের শীষে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেই অংশটা (আওয়ামী লীগ নেতা) সব সময় এসব মারামারির পেছনে ইন্ধন জোগায়। যে কোনো আঞ্চলিক মারামারি, পারিবারিক শত্রুতা বা গোষ্ঠীগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন : ভেড়ামারা প্রতিনিধি জানান, যুবজোট নেতাকর্মীদের হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় প্রামাণিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় স্থানীয় মহাশ্মশানে সমাধি স্থাপনের মাধ্যমে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

এর আগে বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে সঞ্জয়ের লাশ ভেড়ামারা শহরে গোডাউনমোড় এলাকায় বাড়িতে পৌঁছায়। রাতেই লাশ দেখতে যান আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি সঞ্জয়ের বাবা দুলাল প্রামাণিককে সান্ত্বনা দেন। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘাতে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

আর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী জানিয়েছেন, সঞ্জয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। জড়িতদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত থাকবে।

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভেড়ামারার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

যুবজোট নেতা শোভন বহিষ্কার : সঞ্জয় প্রামাণিক নিহত হওয়ার ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা যুব জোটের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শোভনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শাহজামাল পিন্টু স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শোভনকে অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম