সদস্যদের জেন্ডারভিত্তিক আচরণ শেখাচ্ছে পুলিশ
মাহমুদুল হাসান নয়ন
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
থানায় সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এক শ্রেণির পুলিশ সদস্য এটা করে থাকেন। জেন্ডার সংবেদনশীল আচরণে অনীহা কিংবা বোঝার ঘাটতির কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু সেবাপ্রার্থী নন, কর্মক্ষেত্রেও নারী সহকর্মীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক ও অপ্রত্যাশিত আচরণের অভিযোগ রয়েছে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
এমন পরিস্থিতিতে বাহিনীর কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সদস্যদের জেন্ডারভিত্তিক আচরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবাদানে ভাষাগত সংবেদনশীলতা, যতœশীলতা, ধৈর্যশীলতা, আন্তরিকতা ও মানবিক আচরণ ইত্যদি শেখানো হচ্ছে।
প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) একটি মডিউল প্রণয়ন করেছে। গত বছরের নভেম্বরে ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ পুলিশিং’ নামের ওই মডিউলের অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।
বিপিডব্লিউএন জানিয়েছে, অনলাইনের পাশাপাশি চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই প্রশিক্ষণ মডিউলটি প্রিন্ট ভার্সনের মাধ্যমে উš§ুক্ত করা হয়। যেন কর্মক্ষেত্রে বসেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৫০ হাজারের মতো সদস্যকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিপিডব্লিউএন’র সভাপতি ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি আমেনা বেগম যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের মোট সদস্যের ৯১ ভাগ পুরুষ ও ৯ ভাগ নারী। বাহিনীতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের প্রতি কী ধরনের আচরণ করতে হবে; যারা সেবা নিতে আসবে তাদের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে-এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই কোর্সটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের একের প্রতি অন্যের আচরণ কেমন হবে, কোন কথা বলা যাবে, কী বলা যাবে না-সেটাও এখানে রয়েছে। পুলিশে দুই লাখ ৩৫ হাজার সদস্যের মধ্যে দুই লাখ ২০ হাজারই কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর। সেবা প্রদানে তাদের সম্পৃক্ততা বেশি। এ কারণেই গুরুত্ব দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ কোর্সটি সম্পন্ন করলে তা তার সার্ভিস রেকর্ডে চলে যাচ্ছে।
বিপিডব্লিউএন জানিয়েছে, প্রশিক্ষণে তিন ধরনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো-জেন্ডার ও লিঙ্গবিষয়ক কোর্স; যৌন হয়রানি ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের কার্যক্রম। কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের সদস্যদের প্রশিক্ষণে সুনির্দিষ্ট চারটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে মডিউলটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সেগুলো হলো-লিঙ্গ ও জেন্ডারবিষয়ক সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি। লিঙ্গীয় সহিংসতা ও যৌন হয়রানিবিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলা এবং সেবা প্রদান বিষয়ে দক্ষতা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি। নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী সেবাপ্রার্থীর ক্ষেত্রে করণীয় ও সেবা ব্যবহার বিষয়ে দক্ষতা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি। যৌন হয়রানিমূলক আচরণের বিষয়ে পুলিশ সদস্যের সচেতনতা বৃদ্ধি।
পুলিশের প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্টরা জানান, যৌন হয়রানির শিকার নারী ও শিশুদের (কন্যা ও ছেলে) জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনামূলক নীতিমালা প্রদান করেন। যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মূলত ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ পুলিশিং’-এর প্রশিক্ষণে এই নীতিমালার বিষয়গুলোও নিয়ে আসা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালে নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে জাতিসংঘের ‘সিডও’ সনদে স্বাক্ষর করে। এই সনদের অনুসরণ পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্র। এসডিজি’র ৫নং লক্ষ্য ‘জেন্ডার সমতা’ এবং ১৬নং লক্ষ্য ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান’ বাস্তবায়নÑএই প্রশিক্ষণের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রশিক্ষণসংশ্লিষ্ট একজন এসবি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন শায়লা জানান, জেন্ডার সমতাভিত্তিক পুলিশ বাহিনী গঠনে এই প্রশিক্ষণ কার্যকর ভ‚মিকা পালন করবে। আর পুলিশে কর্মরত নারী-পুরুষ সদস্যদের সমতা, ন্যায্যতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে জনগণের নিরাপত্তা ও সেবা সুসংহত হবে।