ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল
কালীগঞ্জে বিবস্ত্র করে যুবককে নির্যাতন
মিজানুর রহমান দুলাল, লালমনিরহাট
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
তুলে নিয়ে গিয়ে একটি খাটের ওপর বসিয়ে সুমন নামের এক যুবককে নানা প্রশ্নের ফাঁকে একজন লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন আর অপরজন কখনো হাত দিয়ে আবার কখনো পা দিয়ে মুখে ও শরীরে আঘাত করছেন। সেখানে উপস্থিত অন্য একজন সেই নির্যাতনের ঘটনা ফোনে ভিডিও করছেন। শুধু তাই নয়, শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে পেটানো হচ্ছে ওই যুবককে। নির্যাতনের এমন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামে। নির্যাতনকারীরা ওই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত। আর নির্যাতনের শিকার সুমন একই এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সুমন কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও রোববার বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২-৩ মাস আগে একই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মিলন ও তার চাচাতো ভাই লিমন মিয়া মাদক পরিবহণে কাজ করতে সুমনকে প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তারা সুমনের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এরই জেরে মঙ্গলবার লতাবর এলাকার মোন্দাদিঘির পাড় থেকে সুমনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মিলনের বাড়িতে। সেখানে এন্তাজ আলীর ছেলে সুমন তাদের সহযোগী রংপুরের রবিউল ও মিস্টারসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন সুমনকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেন। এ নিয়ে কাউকে কিছু জানালে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তারা।
এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দুইটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, দুজন লোক লোহার পাইপ এবং হাত-পা দিয়ে বেধড়ক মারধর করছেন সুমনকে। একপর্যায়ে তার বিশেষ অঙ্গে পানির বোতল ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ সময় সুমন কান ধরে বারবার মাফ চাইলেও নির্যাতন অব্যাহত রাখেন তারা। ভুক্তভোগী সুমন বলেন, মিলন মাদকের একজন গডফাদার। বিষয়টি কাউকে জানালে তারা আমাকে আর বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগেও মিলনের কিছুই ছিল না। বর্তমানে মাদক ব্যবসা করে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। তার বিষয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিনদিন তিনি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে একটি মাদক মামলা এবং ২০২১ সালে নাশকতার মামলা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
মিলনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রায় ১০ বছর আগে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বলে দাবি করে যুগান্তরকে বলেন, সুমনকে অন্য এক মাদক ব্যবসায়ী তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছিল। আমি তার মা-বাবার অনুরোধে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি মাত্র। এখন সুমন সেই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে টাকা নিয়ে আমার নামেই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আর ভিডিওতে তাকে নির্যাতন করতে দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে মিলন বলেন, ওই ভিডিও এডিট করে আমার মাথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ কবির বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।