রাজশাহীতে ভবন নির্মাণ
ইমারত বিধি মানেনি পপুলার ডায়াগনস্টিক
আনু মোস্তফা, রাজশাহী
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
পার্শ্ববর্তী তিনটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়াও গুরুতরভাবে ইমারত বিধি লঙ্ঘন করায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ রাজশাহীর ১৩ তলা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের নকশা বাতিল করেছিল রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
নকশা বাতিল হলেও পপুলার কর্তৃপক্ষ ১ দিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখেনি। নগরীর লক্ষ্মীপুরে বহুতল ভবনটি নির্মাণ শেষে ১ জুন প্রধান অতিথি হিসাবে এটি উদ্বোধন করেন রাসিক’র মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এদিকে প্রভাব খাটিয়ে নকশা পুনর্বহাল করে ভবনের কাজ শেষ করা হলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সেঞ্চুরি হোটেল মালিককে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সুপারিশ করেছে।
বুয়েটের এ প্রতিবেদন আসার পর বিপাকে পড়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। কারণ তারা একবার নকশা বাতিলের পর রিভিউ আবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মালিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত না করেই নকশা পুনর্বহাল করেছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত সেঞ্চুরি হোটেল মালিকদের অভিযোগ, পপুলার দ্বারা প্রভাবিত ও ম্যানেজড হয়ে নকশা পুনর্বহাল করেছিল আরডিএ। এর আগে আরডিএ গঠিত নকশা রিভিউ কমিটি মাত্র ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু আমাদের ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নকশা অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে নগরীর লক্ষ্মীপুরে বহুতল পপুলার ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আরডিএ প্রদত্ত নকশায় শোর পাইলিংয়ের নির্দেশ থাকলেও পপুলার কর্তৃপক্ষ নকশা লঙ্ঘন করে শিট পাইলিং করে।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী ভবন থেকে ৫ ফুট দূরত্ব রেখে নির্মাণের কথা নকশায় নির্দেশ করা হলেও পপুলার কর্তৃপক্ষ কোনো ফাঁকা জায়গা না রেখে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোর কোলঘেঁষে নির্মাণ কাজ চালাতে থাকে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী তিনটি ভবনে ফাটল দেখা দেয়। পাইলিংকালে তিনতলা চৌরঙ্গি মসজিদ ভবনটি পাঁচতলা সেঞ্চুরি হোটেলের গায়ে হেলে পড়ে ও ফাটল দেখা দেয়। একইভাবে পাঁচতলা সেঞ্চুরি হোটেল ভবনেও ফাটল দেখা দেয় এবং ভবনটি হেলে পড়ে। ‘ইমান’ নামের একটি হোটেলও পড়ে ঝুঁকির মধ্যে।
ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি ভবনের মালিকরা পপুলারের নকশা বাতিলের জন্য আরডিএতে আবেদন করেন। আরডিএর দুই ইমারত পরিদর্শক সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ভবন নির্মাণে চারটি ত্রুটি শনাক্ত করেন। গুরুতরভাবে নকশা ও ইমারতবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পপুলারের নকশাটি বাতিল করে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় আরডিএ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পপুলার কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজ বন্ধ না রেখে নকশা পুনর্বহালের জন্য আরডিএর চেয়ারম্যান ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সেঞ্চুরি হোটেলের মালিক আনোয়ার মোস্তফাও মন্ত্রণালয়ে পৃথক আবেদন করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৪ আগস্ট উপ-সচিব মাহবুবুর রহমানকে প্রধান ও আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিককে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির সদস্যরা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মন্ত্রণালয় ও আরডিএর চেয়ারম্যান বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দেন।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে পপুলারকে নকশা ও ইমারত বিধি মেনে নির্মাণ কাজ করা ও ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে নকশা পুনর্বহাল করা যেতে পারে বলে মতামত দেয়। প্রতিবেদনে পার্শ্ববর্তী তিনটি ভবনের ব্যাপক ক্ষতির চিত্রও তুলে ধরা হয়। এদিকে সেঞ্চুরি হোটেলের মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বুয়েট ও রুয়েট কর্তৃপক্ষকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পপুলার ভবনের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে বলে।
১০ জুলাই বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শারিফুল ইসলাম ও অধ্যাপক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে বলা হয়, পপুলার ইমারত বিধি লঙ্ঘন ও নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ কাজ করায় সেঞ্চুরি হোটেলের ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, পপুলারের নকশা পুনর্বহাল করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত সব পক্ষের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের শর্তে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাননি এটা আমরা অবগত নই। বুয়েটের প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাজশাহী পপুলারের ব্যবস্থাপক ফরিদ মো. শামীম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চৌরঙ্গী মসজিদকে আমরা ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। সেঞ্চুরি হোটেলকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য আরডিএর একটি কমিটি সুপারিশ করেছিল। আমরা এই টাকা মালিককে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা গ্রহণ করেননি। বুয়েট থেকে সর্বশেষ কী প্রতিবেদন এসেছে তা আমাদের জানা নেই।