হাজতি নির্যাতন
কুমিল্লা কারাগারে বিশেষ নজরে থাকবেন পাপিয়া
কুমিল্লা ব্যুরো ও গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক হাজতিকে নির্যাতনের ঘটনায় যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা কমিটির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাতে তাকে প্রিজন ভ্যানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন।
কুমিল্লা কারাগার সূত্র জানিয়েছে, রাত সাড়ে ৯টায় কুমিল্লা কারাগারে আনার পরই পাপিয়াকে নারী ওয়ার্ডে রাখা হয়। কুমিল্লা কারাগারে দুটি নারী ওয়ার্ডের ছোটটিতে গর্ভবতী ও সন্তানসহ নারী হাজতিদের রাখা হয়। আর বড়টিতে রাখা হয় অন্য নারী হাজতিদের।
সেখানে ২০-৫০ জন কয়েদি থাকেন। এই ওয়ার্ডেই তিনি রাত পার করেন। অন্যসব কয়েদির সঙ্গেই তাকে রাখা হয়েছে। অন্য সবার মতো তার খাবার, ঘুমানোসহ সব ব্যবস্থা একই নিয়মে। এখানে আসার পর এখনও কোনো দায়িত্ব পাননি পাপিয়া। তবে শিগগিরই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়াও পাপিয়াকে কারাগারে বিশেষ নজরে রাখা হবে, যেন আর কোনো ঘটনার অভিযোগ না ওঠে।
সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ওই কয়েদিকে জেলবিধি অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমরা অন্য কয়েদিদের সঙ্গেই তাকে রেখেছি। তাকে বিশেষ নজরে রাখা হবে।
২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসাবে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলবিধি অনুযায়ী পাপিয়াকে ‘রাইটার’ হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
এদিকে নথি চুরির এক মামলায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনাকে ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়ার পর তার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে সাত হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগী কয়েদি গত ১৯ জুন রুনার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন।
এক পর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিশ বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারেনি।
নির্যাতনের শিকার ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা জানান, ঢাকা কোর্টের একটি নথি চুরির মামলায় তাকে গত ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯ জুন পাপিয়া ও তার সহযোগী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি রক্সি, হাজতি সোনালী, আন্দনিকা, অবন্তিকা, নাজমা সাহিদা, মেট্রন পুলিশ ফাতেমা এবং হাফিজা তাকে হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পেটায় এবং ৪-৫ ঘণ্টা একটি গাছের সঙ্গে টানা দিয়ে বেঁধে রাখে। এ সময় পাপিয়া তার কাছ থেকে কানের দুল ও স্বর্ণের চুরি এবং ৭ হাজার ৪শ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পানি খেতে চাইলে তারা তাকে নর্দমার পানি খেতে দেয়।
রুনা লায়লা যুগান্তরকে বলেন, হলরুমের ফ্লোরে বন্দিদের জন্য ঢালাও বিছানা থাকলেও পাপিয়ার জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা। কারাগারের ভেতরের সাধারণ কয়েদিদের কোনো জিনিস তিনি ব্যবহার করতেন না। খাওয়া ও গোসলের জন্য বিশুদ্ধ পানি আসত বাইরে থেকে। পারিবারিক পরিবেশে ৪-৫ রকমের তরকারি দিয়ে তিনি ভাত খেতেন।
হাতে স্বর্ণের আংটি, নেইলপলিশ, দামি জুতা ও জামাকাপড় পরে সবসময় তিনি ফিটফাট থাকতেন। তিনি আরও জানান, পাপিয়া বন্দি থাকলেও কারাগারে তার ছিল আধিপত্য। তার রুমে ছিল রঙিন টিভি, সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই সুবিধা। এছাড়া ওই কারাগারে গত ৪ বছর ধরে বন্দি এক নারীর কোলে এক-দেড় বছরের শিশু সন্তান রয়েছে বলেও রুনা বিস্ময় প্রকাশ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি করেন।
উল্লেখ্য, হাজতি নির্যাতনের ঘটনাটি গত ২৫ ও ২৬ জুন প্রথম দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় রুনার ছোট ভাই রুবেল গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে জেলকোড অনুযায়ী দায়ী অন্যদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর সোমবার বিকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।