চট্টগ্রাম বন্দরে ঈদের আগে বেড়েছে চাপ
অতিরিক্ত কনটেইনার নিয়ে বিপাকে ১৯ ডিপো
বন্দরের কাছে স্লট বরাদ্দের আবেদন বিকডার
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদের আগে রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের চাপ বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে (আইসিডি)। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার অতিরিক্ত কনটেইনার নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব ডিপো। জট কমাতে বন্দরের দ্বারস্থ হয়েছেন ডিপো মালিকরা। তারা সাময়িক সময়ের জন্য বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার স্থানের (স্লট) ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং ঈদের ছুটিতে ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রেরণ নিশ্চিত করতে একসঙ্গে অনেক পণ্য ডিপোতে এনে রেখেছেন রপ্তানিকারকরা। ১৯ ডিপোতে কনটেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের)। বর্তমানে কনটেইনার আছে প্রায় ১৫ হাজার টিইইউএস। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে গড়ে উঠেছে বেসরকারি ডিপো। এসব ডিপো দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের প্রায় শতভাগ, ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে থাকে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানার উৎপাদিত রপ্তানিমুখী পণ্য ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান বোঝাই করে চট্টগ্রাম নগরী ও এর আশপাশের ডিপোগুলোতে এনে রাখা হয়। এরপর সেই পণ্য ডিপোতে কনটেইনারজাত (স্টাফিং) করে জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে ট্রেইলারযোগে নিয়ে যাওয়া হয় বন্দরে। আগে এই প্রক্রিয়টি হতো চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে। এজন্য তখন প্রচুর স্থানের প্রয়োজন হতো। অনেক সময় স্থানাভাবে দেখা দিত কনটেইনার জট। এই পরিস্থিতি এড়াতে নব্বইয়ের দশকের শেষদিক থেকে বেসরকারি উদ্যোগে ডিপো গড়ে উঠতে থাকে। এসব ডিপো পণ্য হ্যান্ডলিং শুরু করার পর বন্দরের ভেতরে আমদানি ও রপ্তানি কনটইেনারের চাপ অনেকটাই কমে আসে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার যুগান্তরকে জানান, বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে প্রতিদিন সাধারণত ৮-১০ হাজার রপ্তানি কনটেইনার থাকে। কিন্তু সোমবার এই সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি কনটেইনার ডিপোতে এসেছে। এ কারণে স্থান সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন রপ্তানি পণ্য এলে তা স্টাফিং করার মতো জায়গা নেই। এই অবস্থা সামাল দিতে আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটিতে স্লট (স্থান) চেয়েছি। রপ্তানি কনটেইনারগুলোতে থাকা পণ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক।
সূত্র জানায়, কনটেইনার রাখার স্থান চেয়ে রোববার চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিকডা। সংগঠনের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতি ঈদের মতো এ বছর ঈদুল আজহার আগে বেসরকারি ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্য ও পণ্যবোঝাই কনটেইনারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ডিপোগুলোতে ১৫ হাজার রপ্তানি কনটেইনার রয়েছে, যার একটা বড় অংশ ঈদের আগেই শিপমেন্ট করতে হবে। এছাড়া ডিপোগুলোতে ৭ হাজার ২০০ টিইইউএস আমদানি পণ্যের এবং ৫০ হাজার খালি কনটেইনার রয়েছে। এ অবস্থায় ডিপোগুলোতে কনটেইনারের জট কমাতে ও অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি এলাকায় অন্তত ১ হাজার ৫০০ টিইইউএস কনটেইনার সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, স্লট চেয়ে আমাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিকডা। তাদের স্লট দেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
পণ্য রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিপোতে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য স্টাফিং না হলে এবং বন্দরে কনটেইনার পাঠাতে দেরি হলে জাহাজ না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন কিছু ঘটলে রপ্তানিকারকদের বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
কারণ একবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো না গেলে বিদেশি ক্রেতারা সেই পণ্য আর নিতে চান না। নতুন অর্ডার দিতেও অনীহা প্রকাশ করেন।