‘ভেনামি’ চাষে সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা
খুলনাঞ্চল থেকে বাগদা ও গলদা চিংড়ি রপ্তানিতে ধস
ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বাড়ছে
আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত কয়েক বছরে খুলনাঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। নোনা পানির ঘের কমে যাওয়া, মাছের উৎপাদন ঘাটতি, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে চাহিদা কমে যাওয়াই দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সাম্প্রতিক বছরে গলদা-বাগদার জায়গা দখলের আশা দেখাচ্ছে ‘ভেনামি চিংড়ি’। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এটিও মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্যমতে, সাত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে চিংড়ি রপ্তানি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশ থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয় ৪০ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি করা হয় ৩৯ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন। বিগত কয়েক বছরের গড় রপ্তানির হার হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ করে। এই অবস্থা চলতে থাকলে চিংড়ি রপ্তানি তলানিতে এসে ঠেকার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। একসময় দেশের দ্বিতীয় রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিল চিংড়ি। বর্তমানে তা ৭ নম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিদেশের বাজারে চিংড়ির দাম কমে যাওয়া, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, চিংড়িতে নানা অপদ্রব্য মেশানোয় সুনাম নষ্ট হওয়া এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কমছে, ফলে মাঠপর্যায়ে চাষে অনীহা বাড়ছে চাষিদের। আগের মতো নোনা পানির যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ কমে গেছে। ফলে ঘেরের সংখ্যাও কমছে। অব্যাহত ভাইরাসের সংক্রমণে লোকসানে পড়ছেন চাষিরা। চিংড়ি চাষিরা ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায়ও আগ্রহ হারাচ্ছেন। এর পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি (প্যাসিফিক হোয়াইট-লেগড শ্রিম্প অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাদা চিংড়ি) ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে জনপ্রিয় হওয়ায় দেশের চিংড়ি মার খাচ্ছে।
চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানির বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল যুগান্তরকে বলেন, আগে কয়রা-পাইকগাছা-দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলায় ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ করতেন খামারিরা। এখন নোনা পানি ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় না। এতে দেশের রপ্তানির এই খাত মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, এখন আগের মতো উন্মুক্ত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হয় না। ফলে সময় এসেছে চিংড়ি চাষের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৎস্য বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সব সেক্টরের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের।
ভেনামি চাষে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব : দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। এ মাছ চাষে খামারিদের আগ্রহ থাকলেও বিদেশি জাত হওয়ায় ব্যাপকভাবে চাষের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এর পোনা উৎপাদনে হ্যাচারি করারও অনুমতি নেই। আবার খাবারও আনতে হয় দেশের বাইরে থেকে। ফলে ভারতসহ অন্যান্য দেশ যখন ভেনামি দিয়ে বাজার ধরে ফেলছে, তখন আমাদের দেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
২০১৮ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষের অনুমতি দেয় সরকার। পাইকগাছা উপজেলার নোনাপানি কেন্দ্রে পাইলট প্রকল্পে প্রথম দফায় প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৪ হাজার ১০০ কেজি। দ্বিতীয় দফায় উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি। এরপর ২৯ মার্চ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামি চাষের অনুমোদন দেওয়া হয় তিনটি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে বটিয়াঘাটায় দুটি ও কয়রায় একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এখনো তারা পোনা সংগ্রহ করতে পারেনি।
বাণিজ্যিক চাষের বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল বাকী বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় এখন ভোনামির চাহিদা বেশি। অথচ আমাদের দেশে এটি চাষের ব্যাপক অনুমতি নেই। আমরা বাজার হারাচ্ছি। তিনি দ্রুত পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি, খাবার তৈরিসহ চিংড়ি উৎপাদনের সামগ্রিক কাজ দেশে করার অনুমতি প্রত্যাশা করেন।