সুনামগঞ্জের দুর্গম গ্রামে অপরাধীদের ‘গোয়েন্দা কর্মকর্তা’ সাজিয়ে পুলিশ প্রটোকল দেওয়ার ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদককে অবশেষে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ২২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তা দুই বন্ধুকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পরই ফেঁসে যান এই কর্মকর্তা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা, অদক্ষতা, অপেশাদারিত্ব এবং অসদাচরণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী অভিযুক্তকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা সমীচীন মর্মে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।’

২৫ জানুয়ারি গভীর রাতে তারা নিজেদের মেজর পরিচয় দিয়ে এ অভিযান চালান। একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ সাতটি বাড়িতে হানা দেওয়ার সময় তারা বাড়ির মহিলাদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ করেন। একপর্যায়ে গ্রামবাসীর হাতে গণপিটুনির শিকার হয়ে ধরাশায়ী হন তারা।

প্রসঙ্গত, ‘সোর্সকে সাজালেন বিশেষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, পুলিশ প্রটোকল দিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার’ শিরোনামে গত ১২ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর টনক নড়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ঘটনার ২১ দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের হয়। মামলায় ‘সরকারি কর্মকর্তার ছদ্মবেশ ধারণ করে অনধিকার গৃহে প্রবেশ করে তল্লাশি, শ্লীলতাহানি ও হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

এ ঘটনায় বিজন রায় ও আব্দুল কুদ্দুছ ওরফে ডলার নাহিদ নামে দুজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে ডলার নাহিদ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের জড়িত থাকাসহ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসে। এই জবানবন্দি নিয়ে যুগান্তরে গত ৪ মার্চ ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদক জড়িত’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।