বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করবে ইউএসএআইডি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে বলে জানিয়েছে ইউএসএআইডি।
মার্কিন সরকারের অধীনে বেসামরিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বাংলাদেশ উন্নয়নে এর কৌশলপত্র ‘কানট্রি ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন স্ট্যাটেজিতে (সিডিসিএস)’ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউএসএআইডি বলছে, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে সহযোগিতা করা হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক গোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় ইউএসএআইডি কাজ করবে।
ইউএসএআইডি বাংলাদেশ উন্নয়নে এর কৌশলপত্র সিডিসিএসে চারটি প্রধান ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য গণতন্ত্র জোরদার, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সহায়তা।
ইউএসএআইডি বলছে, অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে যুক্ত করে ভৌগোলিক অবস্থান, গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক এবং কয়েক দশকের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণেও বাংলাদেশের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে দারিদ্র্য, সুশাসন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক ও সুশীলসমাজের সক্ষমতার নানা বিষয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশ্বের শরণার্থী জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বাস এখন বাংলাদেশে। এখানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবির রয়েছে।
এ দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে নগরায়ণের অবকাঠামো, মৌলিক পরিষেবা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।
এতসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গ্রাজুয়েশন’ এ উন্নীত হবে। এ দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার কৌশল (সিডিসিএস) আরও দক্ষতার মাধ্যমে সরকারের সাথে কাজ করার জন্য ইউএসএআইডির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।
ইউএসএআইডি বলছে, গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সরকারের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি থাকলেও ১৪ বছরের একদলীয় শাসনের ফলে বাংলাদেশে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাশাপাশি বিরোধীদের মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। তারা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলাপ আলোচনার খুব একটা সুযোগ পান না।
বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং এর শাসন কাঠামোও বেশ দুর্বল যা ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে অদক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং অকার্যকর সম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হওয়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
ইউএসএআইডি বলছে, রাশিয়ার যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতি খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্যসীমার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর দেশের বিদেশি রিজার্ভের পরিমাণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন প্রায় ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আর বাণিজ্য ঘাটতির ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য, সার এবং জ্বালানি তেলে মুদ্রাস্ফীতি এতটাই বেড়েছে যে, ২০২২ সালের আগস্টে জ্বালানির মূল্য ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে।
ইউএসএআইডি বলছে, গত তিন দশকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও মানবসম্পদ এবং কর্মক্ষম জনশক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশের এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু এবং নবজাত শিশুমৃত্যুর হার এখনো অনেক বেশি। আর কিশোরী মাতৃত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে নারীর সমতায়ন বাংলাদেশের জন্য এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। গত কয়েক দশকে বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশে আয়ের ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা কমেছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে রয়েছে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। অপরিণত বয়সে মেয়ে শিশুদের বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি (৫২%)।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় প্রথা এবং বিধিনিষেধের কারণে এখানকার মেয়েদের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তরুণ জনশক্তির সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য। এর মোট জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশের বয়সই ৩০ বছরর নিচে।
বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, ইউএসএআইডি ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদার হিসাবে এর সক্ষমতা জোরদার করতে চায়। এর মূল লক্ষ্য হলো এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে হ্রাস করা। ইউএসএআইডি বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) দ্রুত উদীয়মান উৎস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
চীন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে এবং বাংলাদেশকে অবকাঠামো খাত ও অন্যান্য প্রকল্পে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশের অনুন্নত ও দুর্বল শাসনব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এদের জন্য অনুকূল নয়, চীন এমন শর্তের চুক্তি করেছে। চীনের এসব চুক্তির প্রভাব বেশ সুদূরপ্রসারী।
বাংলাদেশকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ইউএসএআইডি অকৃষিভিত্তিক বেসরকারি খাতের উন্নয়নের প্রতি জোর দিতে হচ্ছে। এসব খাতের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি, ক্ষুদ্র অর্থব্যবস্থাপনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।