বাইডেনকে ৭৫ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি
মোদির সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার ইস্যু তোলার অনুরোধ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ সদস্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার সময় স্খলিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সংকীর্ণতা, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের মতো গুরুতর বিষয়গুলো তুলে ধরতে অনুরোধ করেছেন। তারা এই আরজি জানানোর ক্ষেত্রে ভারত সম্পর্কে পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদনগুলো উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেসের দুকক্ষের সদস্যরা বলেছেন-অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রতিরক্ষা, ভূকৌশলগত সম্পর্কের পাশাপাশি দুদেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা চলছে, তাতে তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সেই সঙ্গে তারা এটাও বিশ্বাস করেন, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর কথাবার্তা খোলামেলা, ভনিতাহীন ও স্পষ্ট হওয়া উচিত।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, শ্রদ্ধাবশত আপনাকে অনুরোধ করছি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আপনি উদ্বেগের কথাগুলো সরাসরি তুলে ধরুন।
‘কংগ্রেস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’র প্যাডে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এই চিঠি লিখেছেন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং নিম্নকক্ষের সদস্য ও ‘কংগ্রেশনাল প্রগ্রেসিভ ককাস’র চেয়ারপারসন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রমীলা জয়পাল। চিঠিতে সই করেছেন উচ্চকক্ষ সিনেটের ১৮ সদস্য ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৫৭ সদস্য। স্বাক্ষরকারীদের সবাই ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্য। তাদের মধ্যে আছেন গতবারের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন।
প্রমীলা জয়পাল মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য হিসাবে ২০২০ সালে একটি বিল এনেছিলেন, যাতে জম্মু কাশ্মীরে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিদান ও যাবতীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল। সেই বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রধানত প্রমীলা জয়পালদের সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্ক এড়াতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ‘হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির’ সদস্যদের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক শেষ মুহূর্তে বাতিল করে দিয়েছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তার ‘ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সফরে’ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর দিনে এই চিঠি লেখা হয়। সফরের ঠিক আগে প্রভাবশালী মার্কিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে মোদি এক সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে ভারতের নাগরিক সমাজ, সংখ্যালঘু, সংবাদপত্র, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ‘কালা কানুন’ প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে বা অভিমত জানাতে চাননি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, গণমাধ্যম ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা, বহুত্ববাদ দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ধারক।
মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য রশিদা তালিব টুইট করে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তিনি মার্কিন কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ বর্জন করবেন
ভারতে এসব বিষয় কেন ‘উদ্বেগজনক’, তা প্রমাণে এই চিঠিতে ‘স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য’ বেশকিছু প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন, কান্ট্রি রিপোর্ট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, অ্যাকসেস নাউ প্রভৃতির প্রতিবেদনের উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা কোনো বিশেষ নেতা বা রাজনৈতিক দলকে অনুমোদন করি না। তা পছন্দের দায়িত্ব ভারতের জনগণের।
যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমও (ইউএসসিআইআরএফ) আলাদাভাবে বাইডেনকে অনুরোধ করেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিয়ে মোদির সঙ্গে আলোচনা করতে।
রশিদা তালিব টুইট করে জানিয়েছেন, মুসলমানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি যিনি অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক কাজকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস যাকে ঘিরে, সেই মোদির জন্য আমাদের দেশের রাজধানীতে আসন পেতে দেওয়া লজ্জার।