Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজশাহী সিটি নির্বাচন

উৎসবমুখর ভোটে ভোগান্তি ইভিএম

Icon

হাসিবুল হাসান, আনু মোস্তফা ও তানজিমুল হক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উৎসবমুখর ভোটে ভোগান্তি ইভিএম

ফাইল ছবি

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র পদে আগ্রহ কম থাকলেও ভোট জমিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। যদিও নির্বাচনের শুরু থেকে তাদের নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা করা হয়েছে, তবে দিনভর দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। 

সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণে জটিলতার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভোটারদের। এর মধ্যে বাগড়া বাধিয়েছিল বৃষ্টিও। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হলেও দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়া গোপনকক্ষে প্রবেশ করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এক নারীকে তিন দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। 

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ১৫৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তবে ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু করতে বিলম্ব হয়। এ সময় ভ্যাপসা গরমে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক ভোটার।

২১নং ওয়ার্ডের শিরোইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটার ২ হাজার ৪৭৭ জন। এই কেন্দ্রের ইভিএমে ভোট নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, এটা তো আমাদের দেশে নতুন প্রযুক্তি। ফলে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। কারও কারও অতিরিক্ত সময়ও লাগছে। জাতীয় তরুণ সংসদ একাডেমি ভোটকেন্দ্রে সকালে একটি বুথের ইভিএম মেশিন হ্যাং হয়েছিল। তবে তা ঠিক করা হয়। 

প্রিসাইডিং অফিসার মো. মিজানুর বলেন, অনেকের আঙুলের ছাপ মিলতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকে আবার ভোট কীভাবে দিতে হয়, তা বুঝতে পারেন না। দু-একজনের বেলায় ভোট দিতে ১০-১৫ মিনিট সময় লেগেছে বলে স্বীকারও করেন তিনি। তবে এ সমস্যা সমাধানে টিসু, সাবানসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা। 

এদিকে সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। আগে থেকে ছিল বৃষ্টির আশঙ্কাও। বেলা সোয়া ১১টায় বৃষ্টি বাগড়া দেয়। আকস্মিকভাবে বৃষ্টি নামায় ভোটকেন্দ্রগুলোয় থাকা দীর্ঘলাইনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। ভোটাররা লাইন ছেড়ে আশপাশের ভবন ও গাছতলায় আশ্রয় নেন। বৃষ্টির বেগ ক্রমাগতভাবে বাড়ায় চিন্তায় পড়েন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।

সকাল থেকেই ভালো ভোটার উপস্থিতি : সকাল থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় সব কেন্দ্রে ভোটারের লাইন দেখা গেছে। ভোটারদের মধ্যে তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষই ছিলেন। এর মধ্যে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। 

অনেক কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া মেয়র পদের অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না। তবে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের যারা নির্বাচন করছেন তাদের এজেন্টদেরও দেখা গেছে। 

গোপনকক্ষে প্রবেশ করায় নারীর কারাদণ্ড : একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিকবার নারী ভোটারদের নিয়ে গোপনকক্ষে প্রবেশ করায় এক নারীকে আটক করে ৩ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় বসে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণে ওই নারীকে গোপনকক্ষে ঢুকতে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

ঘটনাটি ঘটেছে তালাইমারী দারুল উলুম আলিম মাদ্রাসার নিচতলা মহিলা ভোটকেন্দ্রে। ওই নারীর নাম সাবিয়া বেগম। নির্বাচন কমিশনাররা সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই নারীকে একাধিকবার গোপনকক্ষে ঢুকতে দেখে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ৩ দিনের কারাদণ্ড দেন। 

পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ নেই কারও : তিন মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর প্রার্থী, রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ ভোটগ্রহণে নিয়োজিতরা দাবি করেছেন এবার রাজশাহী সিটির ভোট পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের দাবি, কোথাও কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। তিনি বলেন, এর চেয়ে ভালো ভোট আর কী হতে পারে। 

ভোটের পরিবেশ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই তিন মেয়র প্রার্থীরও। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভোট খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। এটি দেশে নির্বাচনের একটি আদর্শ মডেল হতে পারে। 

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন দুপুরে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের কাছে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে ভোটগ্রহণ শেষে সার্বিক মতামত চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কিছুটা প্রভাবিত হয়ে কাজ করেছে বলে মনে হয়েছে। 

লিটন-স্বপনের হাসিমুখে আলিঙ্গন : আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন সকাল সোয়া ৯টায় উপশহর স্যাটেলাইন স্কুলকেন্দ্রে ভোটদান শেষে কেন্দ্র পরিদর্শনে বের হন। কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে তিনি ১৬নং ওয়ার্ডের আটকোষি স্কুলকেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছান। 

একই সময়ে সেই কেন্দ্রে নিজের ভোট দিয়ে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বাইরে আসতেই দুই প্রার্থীর মুখোমুখি সাক্ষাৎ ঘটে। এ সময় লিটন ও স্বপন পরস্পরকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে আলিঙ্গন করেন। কয়েক মিনিট কথা বলার পর লিটন কেন্দ্রটি ত্যাগ করে অন্য কেন্দ্রের উদ্দেশে চলে যান। দুই মেয়র প্রার্থীর কোলাকুলির ছবিটি বুধবার সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম