Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গ্রাহকের টাকা পাচার আলেশা মার্টের

লোপাট ৪২২ কোটি টাকা

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ২০৮৭ ও সিআইডিতে ৩৫ জনের অভিযোগ * বনানী থানায় মামলা

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লোপাট ৪২২ কোটি টাকা

সাড়ে তিন বছরে মানি লন্ডারিংয়ের (টাকা পাচার) মাধ্যমে গ্রাহকের প্রায় ৪২২ কোটি টাকা লোপাট করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। এর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম সিকদার, তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, এসকে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল মামুন, আলেশা মার্টের অন্তত ১০টি অঙ্গ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জন। 

ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ৪২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা মানি লন্ডারিং হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চারটি বেসরকারি ব্যাংকের পৃথক চারটি হিসাব নম্বর ব্যবহার করা হয়। এ ব্যাপারে সম্প্রতি রাজধানীর বনানী থানায় একটি মামলা হয়েছে। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। গত ৩১ মে থানায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় ভুক্তভোগী ৩৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, আলেশা মার্টের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন অফার দিয়ে বহু গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করা হয়। পরে পণ্য বা টাকা ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করা হয়। ২০২০ সালে নিবন্ধিত আলেশা মার্ট ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে মানি লন্ডারিং কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির আত্মসাৎ করা অর্থ ফিরে পেতে গত ১ মে পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে দুই হাজার ৮৭ জন এবং সিআইডিতে ৩৫ জন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম সিকদার ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ওই বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মানি লন্ডারিং অপরাধের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ৫৮ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২০-২১ সালের আয়কর বিবরণীতে মঞ্জুর আলম সিকদার ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। এই বিবরণী দাখিলের সাত মাসের মধ্যেই তার স্থাবর সম্পদ দাঁড়ায় প্রায় ৩২ কোটি টাকায়। আলেশা মার্টের হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে এই স্থাবর সম্পত্তি গড়েছেন বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডে পরিচালকের পদ পাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য মঞ্জুর আলম সিকদার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এই টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জন করা হয়। প্রস্তাবিত পিপল ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেমকে সরাসরি টাকা দিয়েছেন মঞ্জুর আলম। আলেশা মার্টের প্রতি সাধারণ গ্রাহকদের আস্থা তৈরি করতে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে চেক দিয়ে আলেশা মার্টকে মানি লন্ডারিং অপরাধ ঘটাতে সহায়তা করেছে এসকে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল মামুন। তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরব থেকে হাজার হাজার গ্রাহককে আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেন। 

সিআইডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, মামলা দায়েরের আগে সিআইডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। বিক্রেতা ও গ্রাহকদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত নথিপত্র অনুযায়ী, মঞ্জুর আলম সিকদার, তার সহযোগী সাদিয়া চৌধুরী, আবুল কাসেম, আল মামুন, আলেশা মার্ট লিমিটেড (ট্রেড লাইসেন্স নম্বর- ১৫৪৪৮৯৫), আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড, আলেশা কার্ড লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসিং লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আলেশা রাইড, আলেশা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট, আলেশা ফার্মেসি এবং আলেশা এগ্রো লিমিটেডের বিরুদ্ধে অপরাধ তৎপরতার মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তকালে অভিযুক্তের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। এমনকি অপরাধলব্ধ অর্থের পরিমাণও বাড়তে পারে। 

বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমার থানায় কেবল মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলাটি আমরা তদন্ত করছি না। সিআইডি মামলা করেছে। তারাই তদন্ত করছে। তাই তদন্তের অগ্রগতি বা আসামি গ্রেফতারসংক্রান্ত কোনো তথ্য থানায় নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী সিআইডি কর্মকর্তা আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, আমি কেবল মামলা করেছি। তদন্ত করছে অন্যজন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম