Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চাষিদের মাথায় হাত

অক্সিজেন সংকটে পুকুরে পুকুরে মাছ মরে ভাসছে

দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দিনে মনের পর মন মাছ মরে গেছে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অক্সিজেন সংকটে পুকুরে পুকুরে মাছ মরে ভাসছে

ময়মনসিংহের ত্রিশালে পোড়াবাড়ি এলাকায় আবু নোমান রুবেলের মৎস্য খামারে ভেসে ওঠা মরা মাছ সংগ্রহ করছেন জেলেরা -যুগান্তর

টানা তাপদাহে মাছের খামারের পুকুরে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষিদের মনের পর মন মাছ মরে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের পর হঠাৎ বৃষ্টিতেও মাছ মারা যাচ্ছে। 

পুকুরে এয়ারেটর (পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র) থাকলেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অক্সিজেনের যোগান দিতে পারছেন না তারা। অনেক পুকুরে ঠান্ডা পানি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটে তাও সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানাতে পারেনি স্থানীয় মৎস্য অফিসগুলো। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট মোকাবিলায় তারা চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, প্রচণ্ড খরায় পানি স্বল্পতা আর তাপমাত্রা বাড়ায় পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত দাবদাহের পর হঠাৎ মুশলধারে বৃষ্টি নামায় তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেও মাছ মারা যাচ্ছে। 

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- 

ময়মনসিংহ, গৌরীপুর ও ভালুকা : ত্রিশাল উপজেলার পোড়াবাড়ির একেএম আবু নোমান রুবেলের মৎস্য খামারের ১৬ একর জমির পুকুরে প্রায় ৬৫ লাখ টাকার পাবদাসহ দেশীয় ২০ টন মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তিনি বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পুকুরে ঠান্ডা পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পাশের আরেকটি খামারে ১১ টন মাছ মারা গেছে। ওই এলাকার অন্য একটি পুকুরে আরও ৩ টন মাছ মারা গেছে। স্থানীয় বাজারে কিছু মাছ বিক্রি করা গেলেও অধিকাংশ মাছ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভালুকা সদরের মাজহারুল ইসলামের পুকুরে ২ লাখ টাকার মাছ, মল্লিকবাড়ীর শরীফের পুকুরে ৫ লাখ টাকার টেংরা ও গুলশা মাছ এবং মাহমুদপুরের সৈকতের ২০ একর পুকুরে ১০ লাখ টাকার কার্প জাতীয় মাছ মারা গেছে। 

গৌরীপুরে উপজেলার কোনাপাড়ায় রুহুল আমিনের মৎস্য খামারে প্রায় দুই লাখ টাকার পাবদা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ঝলক মৎস্য হ্যাচারির মালিক অজিত চৌহানের হ্যাচারিতে পাঁচ লাখ টাকার রেণু পোনা মরে গেছে। একই অবস্থা জেলার ত্রিশাল, ফুলবাড়ীয়া, গফরগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার খামারে। খামারিরা বলছেন, একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ, অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং অব্যহত থাকলে বাকি মাছও টিকবে না। 

জেলার মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকার মৎস্য খামারগুলো পরিদর্শন করছে এবং ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমাণ প্রস্তুত করছে। তিনি মৎস্য খামারিদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রচণ্ড গরমের সময় পুকুরের পানি নড়াচড়া করা যাবে না। শুধু যতটুকু সম্ভব ঠান্ডা পানি দিতে হবে।

শেরপুর (বগুড়া) : মির্জাপুরের মাছ চাষি গোলাম নবী ও আব্দুস সাত্তার জানান, সকালে জানতে পারেন তাদের পুকুরে মরা মাছ ভাসছে। পরে পুকুরে গিয়ে দেখতে পান অনেক মাছ মরে গেছে। দ্রুত মাছগুলো তুলে বাজারে নেওয়া হয়। 

আবার কিছু মাছ মরে পচে গেছে। গোলাম নবী জানান, তার ২২ বিঘার তিনটি পুকুরে অন্তত ৬৫ থেকে ৭০ মন মাছ মারা গেছে। আব্দুর সাত্তার জানান, তার ১০ বিঘার পুকুরে প্রায় ৪০ মণ মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মাছের আড়তদার ইব্রাহিম হোসেন জানান, শেরপুরে বিভিন্ন প্রজাতির ২ থেকে আড়াইশ মন মাছ মরে গেছে। সেই মাছ কেজিতে একশ থেকে দেড়শ টাকা কমে বিক্রি করা হয়েছে। এতে মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 

উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। সপ্তাহজুড়েই সকালে পুকুরে মাছ ভাসছিল। অতিরিক্ত তাপদাহে কারণে পুকুরগুলোতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে মাছ মরে ভেসে ওঠে। 

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) : উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাওয়াকান্দি গ্রামের মনির হোসেন জানান, তার ২ একর মাছের প্রজেক্টে বহু কার্প জাতীয় মাছে মরে ভেসে উঠেছে। রামপুর বাজারের শিপু ভূঁইয়া জানান, তার ১ একরের প্রজেক্টের লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে গেছে। 

রামপুর বাজারের সোহাগ ভূঁইয়ার দেড় একর প্রজেক্টের তেলাপিয়া, সরপুঁটি, রুই, কাতলা, মৃগেল মাছসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা বলেন, গত দুই দিনে অন্তত অর্ধশত মৎস্য চাষি এই সমস্যা নিয়ে অফিসে বা ফোনে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি। যেখানে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে বড় মাছ উঠিয়ে ট্যাবলেট ছাড়ার কথা বলেছি। 

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হাছনবাহার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, একটি পুকুরে তেলাপিয়া মাছ মরে ফেনার মতো পানিতে ভাসছে। প্রতিটি মাছের ওজন অন্তত ৫শ থেকে ১ হাজার গ্রাম হবে। 

কেউ এগুলো তুলে নিয়ে বিক্রি করছেন, কেউবা শুঁটকি তৈরি করছেন। মাছ চাষি আব্দুর রহিম বলেন, আমার পুকুরের প্রায় ২ টন মাছ মরে গেছে। এর মধ্যে ছিল তেলাপিয়া, কার্পো, ঘাসকার্প ও সিলভারকার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, প্রচন্ড খরায় পানি স্বল্পতা আর তাপমাত্রা বাড়ায় পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। অপরদিকে অতিরিক্ত তাপদাহের পর হঠাৎ মুশলধারে বৃষ্টি নামায় তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেও মাছ মারা যাচ্ছে।

লাকসাম (কুমিল্লা) : উপজেলার মামিশ্বর গ্রামের জাকারিয়া মৎস্য খামারের শহীদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ৩৯৫ শতক জলাশয় লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। কয়েক দিনের তাপদাহে প্রায় ৪০ মন মাছ মারা গেছে। 
উত্তরদা ইউনিয়ন ঠেঙ্গারপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হক মামুনের কয়েকটি পুকুরে ২০/৩০ মণ মাছ মরে গেছে। মনপাল গ্রামের মান্নানের পুকুরের ২০/২৫ মণ মাছ মরে গেছে। এরশাদ মিয়া ফেরি করে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। তিনি লাকসামের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার শহরের মাছপট্টিতে এসেছেন মাছ কিনতে। তিনি বলেন ‘মাছ মইরে যাইছে, মাছ পাওয়া যাইছে না। গরমে পুকুরের পানির অবস্থা ভালো না।’

লাকসাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, প্রচণ্ড উত্তাপের হাত থেকে মাছ বাঁচাতে পুকুরে চুন মিশিয়ে দেওয়া ও সেচযন্ত্র দিয়ে পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে পানিতে অক্সিজেনের জোগান বাড়বে। 

সোনাগাজী (ফেনী): মহুরি প্রজেক্টে বাঁশখালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মাঈনুল ইসলাম চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রকল্পের সদস্যদের আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা গেছে।

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : মাছ চাষি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফেরদৌস আলম তালেব বলেন, আমার এক পুকুরে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাছ মারা গেছে। অপর চাষি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ঝন্টু বলেন, আমার ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মাছ মারা গেছে। 

বাঘা (রাজশাহী) : শনিবার আড়ানী পৌর এলাকার গোচর বড়ালে পুকুরের মরা মাছ ধরতে দেখা যায় শিশুদের। গোচর গ্রামের সোহেল হোসেন বলেন, আমি নদীর ধার দিয়ে গরুর খাস কাটতে যাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি মাছ ভেসে আছে। পরে ২ কেজি মাছ সংগ্রহ করি। অপরদিকে জামনগর ইউনিয়নের গৈয়লার ঘোপের কয়েকজন নারী-পুরুষকেও মরা মাছ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম