আলমডাঙ্গায় প্রধান শিক্ষককে পেটালেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়েছেন যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী। বুধবার সকালে আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের কক্ষে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে যুব মহিলা লীগ নেত্রী সামসাদ রানু ওরফে রাঙা ভাবি প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানকে মারধর করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। সামসাদ রানু ওরফে রাঙা ভাবি চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। মারধরের পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ছাত্র ও শিক্ষকদের বিবরণ থেকে জানা যায়, বুধবার বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়। সামসাদ রানু তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে অর্ক হাসানকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন। ছেলের ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা কীভাবে ও কখন হবে তা জানতে তিনি অপেক্ষা করেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় জামার কলার ধরে প্রধান শিক্ষককে টেনে শ্রেণিকক্ষের দিকে নিয়ে যান এবং কিল-ঘুসি ও চড় মারতে থাকেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী। এক পর্যায়ে পায়ের জুতা খুলে মারতে উদ্যত হলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে বাধা দেন।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান জানান, বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে সামসাদ রানু আমাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছেন। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন ছিল। অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণে বিলম্ব ঘটে। এ কারণে সামষ্টিক মূল্যায়নের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। এরই মধ্যে সামসাদ রানু আমার জামার কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দিকে নিয়ে যান। আমাকে কিল-ঘুসি ও চড় মারতে থাকেন। তার পায়ের জুতা খুলেও আমাকে মারতে যান। অন্যান্য শিক্ষকরা এগিয়ে আসায় তিনি তা করতে পারেননি। আকস্মিক মারধরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছি। পরীক্ষা শেষে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বিষয়টি মোবাইল ফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সামসাদ রানু প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার কথা আংশিক স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ না খোলায় আমার ছেলেসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তীব্র গরমে তারা হাঁসফাঁস করছিল। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে আমি শ্রেণিকক্ষের তালা খুলে দেওয়ার জন্য বলি। তিনি তালা খুলতে না চাইলে আমি তার জামার কলার ধরে শ্রেণিকক্ষের কাছে নিয়ে যাই।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। প্রধান শিক্ষকও আমার মোবাইল ফোনে কল করেছিলেন। আমি তাকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। কোনো অভিযোগ থাকলে অভিভাবক হিসাবে সামসাদ রানু করতে পারতেন। কিন্তু একজন প্রধান শিক্ষককে এভাবে মারধর করা চরম অন্যায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।