রাজশাহীতে সিইসি
গুরুতর অপরাধ করলে প্রার্থিতা বাতিল
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি প্রশ্নে কঠোর রয়েছে। কেউ আচরণবিধি না মানলে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রার্থীদের অবশ্যই আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে তারা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচনি আচরণবিধির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো প্রার্থী আচরণবিধির প্রশ্নে গুরুতর অপরাধ করলে তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। এর আগেও আমরা নির্বাচনের আগের দিন প্রার্থিতা বাতিল করেছি। এর দৃষ্টান্ত আছে। সুতরাং সবাইকে নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বুধবার রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে এ মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময়ের আয়োজন করে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়। ২১ জুন রাজশাহী সিটিতে ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আমরা ইভিএমে অসংখ্য নির্বাচন করেছি। ইভিএম এ প্রায় প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এই পদ্ধতি নিয়ে আর কথা শুনতে চাই না। যদি কারও আস্থা না থাকে, তাহলে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। কারণ ইভিএমে কোনো ধরনের অনিয়ম, ম্যানিপুলেশন, টেকনিক কোনো কিছুই আমরা দেখতে পাইনি। যদি ইভিএমে ভূত কিংবা পেত্নি দেখতে পেতাম, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কারণ আমরাও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করব।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুস্পষ্ট নিদের্শনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগবে। এটার প্রয়োজন আছে। আপেক্ষিক অর্থে এটা কম বা বেশি হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে প্রার্থীদের মাধ্যমে। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন তাহলে সেটা সম্ভব হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে সিসিটিভি থাকবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার দিকে আমাদের চোখ থাকবে। মিডিয়াতে বিষয়টি কিভাবে ওঠে আসে সেটা অধুনা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ। ভোর থেকে ভোটাররা আসবেন। লাইন ধরে দাঁড়াবেন। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা বা লাঠিপেটা হচ্ছে কি না? জোরপূর্বক ভোটারদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না? সেটা দেখা হবে। ভেতরে মিডিয়াও থাকবে। তাদের ছবি তুলতে, কাজ করতে বাধা নেই। গোপন কক্ষের বুথ ছাড়া বাকি সর্বত্রই সাংবাদিকরা যেতে পারবেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারব, নির্বাচন কতটা শুদ্ধ, সিদ্ধ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে।
প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন কিন্তু কমিশন করে না-আচরণবিধি লঙ্ঘন আপনারা করেন। আপনাদের অতি উৎসাহী সমর্থকরাই আচরণিবিধি লঙ্ঘন করেন। পারস্পরিক সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে হবে। কেননা আপনাদের সহযোগিতা না থাকলে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আনিসুর রহমান, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন রাসিক নির্বাচনের রিটানিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন।
সভার শুরুতে মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের অভিযোগ শোনেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা। এ সময় রাসিক নির্বাচনের চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন বক্তব্য দেন। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বক্তব্য দেননি।
মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো বৈদেশিক চাপ অনুভব করছি না। পেপার-পত্রিকায় বিভিন্ন চাপ আসছে, এমনটা শোনা যাচ্ছে। ইস্যুগুলো আমরা গায়েও মাখছি না। আমাদের দায়িত্ব হলো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনগুলোকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।