র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু
আর্থিক লেনদেনের চিরকুটে এডিসি মিল্টনের নাম
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। জেসমিনের নিজ হাতে লেখা আর্থিক লেনদেনের ৪৬টি চিরকুট হাতে পেয়েছে তদন্ত দল।
এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আর্থিক লেনদেনের চিরকুটে পাওয়া গেছে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়ের নাম। সুলতানার নিজ হাতে লেখা এসব চিরকুট তার স্বজনরা ২৯ মে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির হাতে তুলে দিয়েছেন। ৪৬টি চিরকুটের মধ্যে একটির পাতায় মোবাইল ব্যাংকিং নগদের নম্বর ০১৯৭১২০৫৯৮২, অঙ্কে ও কথায় লেখা ৫০ হাজার টাকা, যার তারিখ ৫-০১-২০২৩ (বৃহস্পতিবার) ও এডিসি মিল্টনের নাম লেখা আছে। সবই জেসমিনের হাতে লেখা বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন।
জেসমিনের মামা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু যুগান্তরকে বলেন, নওগাঁ শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করত জেসমিন। সম্প্রতি সেই বাসা থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে গিয়ে আর্থিক লেনদেনের বিবরণ সংবলিত ৪৬টি চিরকুট পাওয়া যায়। এসব চিরকুটে জেসমিন বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে টাকা পাঠানোর কথা লিখে রেখেছিল। একটি চিরকুটে নওগাঁর এডিসি (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়ের নাম, একটি নগদ নম্বর ও ৫০ হাজার টাকা লেনদেনের কথা উল্লেখ রয়েছে। বেশিরভাগ চিরকুটে যুগ্মসচিব এনামুল হকের নাম ও বেশকিছু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বর রয়েছে। জেসমিনের হাতে লেখা চিরকুটগুলোর সূত্র ধরে অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এনামুল হকের করা মামলা ও মৃত্যুর ঘটনার অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু ও তার বিরুদ্ধে যুগ্মসচিব এনামুল হকের করা মামলার বিষয়টি তদন্ত করছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। ২৯ মে নওগাঁ সার্কিট হাউজে জেসমিনের স্বজনদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে তদন্ত কমিটি। জেসমিনের বাড়িতে পাওয়া আর্থিক লেনদেনের চিরকুটে নিজের নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর এডিসি (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। জেসমিনকে আমি চিনতাম না। জেসমিনের সঙ্গে আমার পরিবারেরও কোনো সম্পর্ক ছিল না।
তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান যুগান্তরকে বলেন, খুঁটিনাটি সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ই প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করছেন তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে র্যাব অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল) ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
২৪ মার্চ সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্মসচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকাল। জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী আল আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।