চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর
বে-ক্রসিং অনুমতিবিহীন লাইটারে অনীহা আমদানিকারকদের
জটিলতার মুখে পণ্য খালাস * ডব্লিউটিসি বলছে ষড়যন্ত্র
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বে-ক্রসিং অনুমতিবিহীন লাইটারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও পরিবহণে রাজি নন আমদানিকারকরা। এ নিয়ে ফের মুখোমুখি অবস্থানে পণ্য আমদানিকারক এবং লাইটারের ট্রিপ বরাদ্দে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। সোমবার সন্ধ্যায় বার্থিং মিটিংয়ে আমদানিকারকরা সাফ জানিয়ে দেন, সমুদ্র অতিক্রম করার অনুমতি না থাকা লাইটার জাহাজ তারা ব্যবহার করবেন না। তাদের আপত্তির মুখে ওইদিন পণ্ড হয়ে যায় বার্থিং মিটিং। ফলে পণ্য খালাসের জন্য কোনো লাইটার বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বহির্নোঙরে অবস্থানরত অন্তত ১৬টি মাদার ভেসেলের বিপরীতে লাইটার বরাদ্দের কথা ছিল।
প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০টি লাইটার পণ্য বোঝাই করতে বহির্নোঙরে যায়। বিষয়টির সুরাহা না হলে বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস জটিলতার মুখে পড়তে পারে।
সাড়ে ৯ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করতে পারে না। তাই বড় জাহাজগুলো (মাদার ভেসেল) বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করে।
অভ্যন্তরীণ রুটের ছোট আকারের জাহাজ ওইসব মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস করে দেশের বিভিন্নস্থানে নিয়ে যায়। সিমেন্ট ক্লিংকার, খাদ্যশস্য, সার, চিনি ও শিল্পের বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল এভাবেই খালাস হয়। তবে কনটেইনার বহির্নোঙরে খালাস সম্ভব হয় না। তাই কনটেইনার বোঝাই জাহাজগুলো জেটিতে ভিড়তে হয় পণ্য খালাসের জন্য। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরসহ দেশের বিভিন্ন নৌরুটে ১২ শতাধিক লাইটার জাহাজ চলাচল করে। বন্দরের বহির্নোঙরে যেতে হলে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর থেকে বে-ক্রসিং অর্থাৎ সাগর পাড়ি দেওয়ার যোগ্যতা সনদ বা অনুমতিপত্র নিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, বে-ক্রসিং অনুমতিপত্র ছাড়াই বেশকিছু লাইটার বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করছে। ডব্লিওটিসি সেগুলো বরাদ্দ দেয় আমদানিকারকদের অনুকূলে।
একাধিক আমদানিকারক জানান, বে-ক্রসিং অনুমতিবিহীন লাইটারে করে পণ্য খালাস ও পরিবহণ দুটোই ঝুঁকিপূর্ণ। সাগরের বিশালাকার ঢেউয়ের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে এগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বে-ক্রসিং অনুমতিপত্র না থাকায় আমদানিকারকরা বিমার টাকা পান না। এ অবস্থায় তারা আর ঝুঁকিপূর্ণ লাইটারের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করতে রাজি নন।
অপরদিকে ডব্লিওটিসি’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, একটা অজুহাত দেখিয়ে কিছু আমদানিকারক অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছেন। অথচ তারা আরও ছোট সাগরে একেবারেই চলাচল নিষিদ্ধ বালু বোঝাই বাল্কহেড দিয়েও পণ্য খালাস ও পরিবহণ করছেন।
আর আমদানিকারকদের অনেকেরই নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে। তারা ডব্লিওটিসিকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই সরাসরি লাইটার ভাড়া করার পাঁয়তারা করছে। এর আগেও একাধিকবার এরকম চেষ্টা চালিয়েছিল। সফল হয়নি। এটা ডব্লিওটিসি’র বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র। লাইটার জাহাজগুলো সাধারণত এই প্রতিষ্ঠানের অধীনেই পণ্য পরিবহণ করে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগেও একাধিকবার দুপক্ষ জাহাজ বরাদ্দ, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়েছে। এরপরও জাহাজের ট্রিপ বরাদ্দে এখনো ডব্লিওটিসি’র কর্তৃত্ব রয়েছে। ডব্লিওটিসি’র যুগ্ম পরিচালক আতাউল করিম রঞ্জু মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এতদিন বে-ক্রসিং অনুমতি ছাড়া লাইটার নিলেও এখন আমদানিকারকরা বলছেন আর নেবেন না। এটা নিয়ে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। সোমবার বার্থিং মিটিং হয়নি। তাই জাহাজ বরাদ্দও হয়নি। আশা করছি পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে এর তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ এখন জাহাজের সংখ্যা কম।’
তিনি জানান, বে-ক্রসিংয়ের অনুমতি নিতে হয় ডিজি শিপিং থেকে। অনুমতি নেই এমনটা নয়। কোনো কোনো জাহাজ আবেদন করার পরও নবায়ন করা হচ্ছে না। এ কারণে কারও কারও অনুমতিপত্রের মেয়াদ এক সপ্তাহ বা এক দুই মাস পেরিয়ে গেছে।