Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অপরাধী চিহ্নিত করেই দায় সারা

মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ একাধিক সংস্থা

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ একাধিক সংস্থা

ফাইল ছবি

প্রতিবছরের মতো এবারও কুরবানির ঈদ ঘিরে মসলাজাতীয় পণ্যে অতিরিক্ত মুনাফা করছে সিন্ডিকেট চক্র। সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়িয়েছে অস্বাভাবিক দাম। পরিস্থিতি এমন-১৩০ টাকায় আমদানি করা প্রতি কেজি আদা ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৩০ টাকা কেজির জিরা ক্রেতাকে ৮৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া গত এক মাসে এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি ও রসুনের দাম হুহু করে বেড়েছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজার অভিযানে নেমেছে সরকারের একাধিক সংস্থা। তদারকিতে দোষীদের চিহ্নিত করলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর বাজারে সর্বস্ব হারাচ্ছেন ভোক্তা।

এদিকে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের তদারকি টিম, সিটি করপোরেশনসহ একাধিক সংস্থা কাজ করছে। এ সংস্থাগুলোর কাজ ছিল ঈদ ঘিরে মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম সহনীয় রাখা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বাজারে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না যে দাম কমেছে। বরং সব পণ্যের দাম লাগামছাড়া। এর মধ্যে কিছু পণ্যের মূল্য বেড়েছে যৌক্তিকভাবে। আবার কিছু পণ্য কারসাজি করে দাম অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম সূত্রমতে, পেঁয়াজ, এলাচ, জিরা, লবঙ্গসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ৬০০ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট। যাদের তৎপরতায় শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আদার মূল্য নিয়ে কারসাজিতে জড়িত রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের আড়তদারদের চিহ্নিত করেছে। অধিদপ্তর বলছে, বিভিন্ন দেশের আদার মানের ওপর নির্ভর করে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ১২৯-২৫০ টাকা। কিন্তু দেশের আড়তে বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা, যা খুচরা বাজারে ৩৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, জিরার আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়েও কম দামে এলসি খোলা হয়েছে। তবে সঙ্গে ডিউটি আছে। এতে প্রতি কেজি জিরার আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৩৩২-৩৩৫ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৬০ টাকায়। সেক্ষেত্রে এলসি মূল্য থেকে খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে ৪৬৮-৫২৫ টাকা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

পাশাপাশি আদা আমদানি হয়েছে প্রতি কেজি গড়ে ১৭০-১৮০ টাকায়, যা বিভিন্ন দেশ থেকে এলে পরিবহণে প্রায় ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়। সেখানে যদি ১৫ শতাংশের দাম বাড়তি ধরে এবং এর সঙ্গে যৌক্তিক লাভ রেখে বিক্রি করা হয়, তারপরও দেশের আড়তে বিক্রয়মূল্য অনেক বেশি।

রাজধানীর নয়াবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারক ও আড়তদাররা মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। তারা বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখাচ্ছেন। কিন্তু যে টাকা দিয়ে আমদানি করেছে, বিক্রি করছে এর দ্বিগুণ দামে। আড়ত থেকে পণ্য কিনলে ক্যাশ ম্যামো দিচ্ছে না। যে কারণে তদারকি সংস্থা আমাদের জরিমানা করছে। কিন্তু তাদের কিছুই করছে না।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা। তারা বিভিন্ন সময় বাড়তি মুনাফা করতে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায়। ঈদ ও রোজা ঘিরে এই প্রবণতা বেশি। কুরবানির ঈদ এলেই মসলাজাতীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। এবারও একই পরিস্থিতি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য পর্যালোচনা করে ভোজ্যতেল, চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে ক্রেতাকে ভোগান্তিতে ফেলছে। এসব কাজ যে বা যারা করছে, তাদের একাধিকবার সরকারের একাধিক তদারকি সংস্থা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না নেওয়ায় কারসাজি বন্ধ হচ্ছে না। যে কারণে সেই চক্রের সদস্যরা বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। তদারকিতে একাধিক সংস্থা ব্যর্থ হচ্ছে। তাই এবার তালিকা ধরে অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।

মসলাজাতীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, প্রচলিত ভোক্তা অধিকার আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই অসাধুরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তবে এ আইনের আধুনিকায়নে কাজ চলছে। কয়েকটি কোম্পানি পণ্যমূল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবৈধ মজুত ও উৎপাদন বন্ধের মতো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের মাধ্যমে ৫৪টি মামলা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুক বলেন, পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি আড়তদারদেরও কারসাজি আছে। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটের ৬০০-এর বেশি মধ্যস্বত্বভোগীর নাম-মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছি। পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার নেপথ্যের এসব কারিগরের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যক্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম