ত্রিমুখী সংকটে বস্ত্রশিল্প
১৫ মাসে স্পিনিং মিলের ক্ষতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তুলা আমদানির ঋণপত্র খুলতে না পারা, গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকলেও বাড়তি বিল এবং বিদেশি কাপড়ের কারণে স্থানীয় বাজারে চাহিদা হ্রাস-এই ত্রিমুখী সংকটে দেশের বস্ত্র খাত। এসব কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও টিকে থাকতে বাধ্য হয়ে লোকসানে সুতা বিক্রি করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে অনেক মিল বন্ধ হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা মূল্যের ওঠানামা, গ্যাস সংকট, গ্যাস ব্যবহার না করে অতিরিক্ত বিল ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানতের কারণে স্পিনিং মিলগুলোর গত ১৫ মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার টেক্সটাইল খাতে বিরাজমান সমস্যার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। রাজধানীর কাওরান বাজারে বিটিএমএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়। মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বস্ত্রশিল্প একটি গভীর চক্রান্তের সম্মুখীন। প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের বিদ্যমান ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করে দেশকে আবারও সুতা, কাপড়সহ ড্রেস-ম্যাটেরিয়েলের জন্য পরনির্ভরশীল করার জন্য চক্রান্ত চলছে। যেমন গৌরবময় সোনালি আঁশ পাট এখন শুধুই অতীত। শুধু দেশাত্মবোধ, সঠিক পলিসি না থাকার কারণেই পাট হারিয়ে গেছে।
অনুরূপভাবে সেই চক্রান্তটি টেক্সটাইল খাতের জন্যও করা হচ্ছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বন্ডের মাধ্যমে আমদানিকৃত সুতা, কাপড় ও ড্রেস-ম্যাটেরিয়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সুতার মজুত বৃদ্ধি পেয়ে মিলগুলোর আর্থিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক। অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ইতোমধ্যে কয়েকটি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আরও মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী ঈদুল আজহার সময় মিলগুলো শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, মজুরি বোনাসসহ পরিশোধ এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি বিল প্রদান করতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এর ব্যাখ্যায় খোকন বলেন, গত এক বছরে মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৮৬ শতাংশ। প্রতিবারই মূল্য বৃদ্ধির আগে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শিল্পে গ্যাস সংকট থেকেই যাচ্ছে। অথচ মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুতার উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৩৫-৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে সংকটের কারণে মিলগুলো উৎপাদন ক্ষমতার ৪০-৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। এ কারণে উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত দিন বিবেচনায় মিলগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে বর্তমানে উৎপাদন মূল্যের চেয়ে ১৮-২০ শতাংশ কম দামে সুতা বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মূল্য বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে গ্যাস ব্যবহার না করেও একটি মিলকে গড়ে বছরে অতিরিক্ত ৩৬ কোটি টাকা বিল দিতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা মূল্যের ওঠানামা, গ্যাস সংকট, গ্যাস ব্যবহার না করে অতিরিক্ত বিল ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানতের কারণে স্পিনিং মিলগুলোর গত ১৫ মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
খোকন বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু গত এক বছর যাবৎ তহবিল থেকে ঋণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে এবং তহবিলের আকার প্রতিটি মিলের ক্ষেত্রে ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনায় পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ তুলা আমদানির প্রয়োজন হয়, তা করতে পারছে না। যা উৎপাদন খরচকে বৃদ্ধি করছে।