সিটি করপোরেশন নির্বাচন: খুলনা
সম্পদে এগিয়ে আছেন খালেক ঋণে মধু
নূর ইসলাম রকি, খুলনা
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে তিন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা আ. আউয়াল।
তিন প্রার্থীর হলফনামা যাচাই করে দেখা গেছে, সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন খালেক এবং বাৎসরিক আয় ও ঋণে এগিয়ে আছেন মধু। মাদ্রাসা শিক্ষক আউয়াল মাত্র ৬ হাজার টাকা নগদ নিয়ে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
২০১৮ সালে খালেকের হলফনামা : তালুকদার আব্দুল খালেকের পেশা ছিল মৎস্য ঘেরের ব্যবসা। কৃষি খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মৎস্য ঘের থেকে বাৎসরিক আয় ছিল ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩শ, ব্যাংক সুদ বাবদ বাৎসরিক আয় ৮ লাখ ৫১ হাজার ৮০ এবং প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় বাবদ সঞ্চয়পত্রে বাৎসরিক ৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ব্যাংক সুদ ৯৯ হাজার ৮২৯। এছাড়া সংসদ-সদস্য পারিতোষক ৬ লাখ ৬০ হাজার এবং ভাতাদি ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭৫ টাকা।
এছাড়া নিজ নামে নগদ টাকা ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা, স্ত্রীর নামে ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯৪ টাকা, নিজ নামে ৩টি ব্যাংকে ২ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৬ টাকা, স্ত্রীর নামে ২টি ব্যাংকে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৪ টাকা, এসএসবিএসি ব্যাংকের শেয়ার ২ কোটি টাকা, নিজ নামে সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ টাকা, এফডিআর ১০ লাখ, পোস্টাল এফডিআর ১৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা, এফডিআর ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৯ টাকা। লেক্সাস গাড়ির দাম ৪৪ লাখ, মাইক্রোবাস ১৪ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে মিটসুবিসি পাজেরোর মূল্য ধরা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৪৫ টাকা। স্ত্রীর নামে বৈবাহিক সূত্রে ২৫ ভরি স্বর্ণ, ৪টি ফ্যান, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেন বাবদ ৭৫ হাজার টাকা, ২টি খাট ও ৪টি আলমারি, সোফাসেট, ডাইনিং টেবিলের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষি জমি, অকৃষি জমি ৩ কাঠা, জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি। তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রীর নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। জমিসহ অর্ধেক বাড়ির মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া জমিসহ ৫ তলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। এছাড়া তার মৎস্য ঘেরে বিনিয়োগ দেখানো ছিল ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
২০২৩ সালে খালেকের হলফনামা : এ বছর কৃষি খাতে তার বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, বাৎসরিক ব্যাংক সুদ থেকে ২ লাখ ১৮ হাজার এবং কেসিসির মেয়র হিসাবে পারিতোষিক এবং ভাতা ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা, স্ত্রী উপমন্ত্রীর পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। তালুকদার খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে। হলফনামায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার দুটি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে লেক্সাসের দাম ৪৪ লাখ টাকা এবং মাইক্রোর দাম দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৭ লাখ টাকা। এছাড়া খালেকের স্ত্রী পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ টাকা আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। তিনি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ব্যবহার করেন। এর দাম ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষি জমির মালিক। এছাড়া তিনি ৩ দশমিক ২১ একর কৃষি জমি ও ৩ কাঠা অকৃষি জমির মালিক। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রীর নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। জমিসহ অর্ধেক বাড়ির মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া জমিসহ ৫ তলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল রোড শাখায় তালুকদার খালেক ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে ।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু : পেশায় একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি ঠিকাদার। ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৩ টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৮৭ টাকাসহ মোট ৯০ লাখ ১২ হাজার টাকা। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বাৎসরিক আয়ে তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে এগিয়ে তিনি। এছাড়া মধুর খুলনার মধুমতি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া রয়েছে ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে-নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর, একটি গাড়ি যার মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া স্থাবর সম্পদ হিসাবে দেখিয়েছেন-সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও ৪ তলা বাড়ি, টুটপাড়া মৌজায় ০.১৩৭২ ও ০.১২৪৪ একরের দুটি জমি যার সর্বমোট মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আ. আউয়াল : নগদ মাত্র ৬ হাজার টাকা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন। পেশায় তিনি মাদ্রাসা শিক্ষক। হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন কামিল পাশ। তিনি পেশা হিসাবে লিখেছেন জামি’আ রশীদিয়া গোয়ালখালী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং সাধারণ ব্যবসায়ী। তিনি আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২১০ টাকা এবং মাদ্রাসার শিক্ষকতা পেশা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমি। তার নামে কোনো মামলা নেই।
এদিকে বৃহস্পতিবার বাদ পড়ে যাওয়া কেসিসির অপর চার মেয়রপ্রার্থী খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আপিল করার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছেন। অনেকেই কাগজপত্র সংশোধন করেছেন। চার মেয়র প্রার্থী আপিলের মাধ্যমে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় পাবেন বলে আশাবাদী। মনোনয়নপত্র অবৈধ হয়েছিল যেসব মেয়র প্রার্থীর তারা হলেন-স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর মধ্যে এসএম শফিকুর রহমান, আল আমিন মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী ও সৈয়দ কামরুল ইসলাম এবং জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন।