Logo
Logo
×

শেষ পাতা

১৪ লিফট ও ফায়ার সিস্টেম স্থাপন

যবিপ্রবিতে পাঁচ কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি!

তদন্তে নেমেছে দুদক

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যবিপ্রবিতে পাঁচ কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ১৪টি লিফট এবং ফায়ার ফাইটিং ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম স্থাপনে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় চলছে। অনিয়মের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুটি টেন্ডারে ১৪টি লিফট এবং ফায়ার ফাইটিং ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম স্থাপনে প্রায় ১৫ কোটি টাকার কাজে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।

যবিপ্রবিতে ১৪টি লিফট স্থাপনে গত বছরের শুরুতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হরিজন টেকনো লিমিটেডকে কার্যাদেশ না দিয়ে রি-টেন্ডার (পুনরায় দরপত্র) আহ্বান করে যবিপ্রবি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর।

গত বছর এপ্রিলে প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রায় ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার কার্যাদেশে ‘মেশিনরুম টাইপ’ লিফট সরবরাহের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা লিফটগুলো ‘মেশিনরুম লেস টাইপের’।

সূত্রের দাবি, ‘মেশিনরুম টাইপ’ লিফটের দাম ৭০ লাখ টাকার বেশি। আর ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ লিফটের দাম প্রায় অর্ধেক। লিফটের টাইপ পরিবর্তন করে প্রায় চার কোটি লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অভিযোগ-প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য রি-টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এ কারণে হরিজন টেকনো লিমিটেড উকিল নোটিশ পাঠায়। পরবর্তী সময় টেকনোকে ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়।

এ টাকা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড দিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এছাড়া প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের অভিজ্ঞতা সনদ ও লিফট সম্পর্কিত তথ্য ও কাগজপত্র পূর্ণাঙ্গ ছিল না। অভিযোগকারীদের দাবি-কোটি টাকার বেশি টেন্ডার বাণিজ্য হয়েছে।

লিফট বুঝে নেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির আহ্বায়ক কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ গালিব এবং সদস্যসচিব পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী পরিচালক কুতুবউদ্দিন চিশতী জানান, লিফটের মালামাল ক্যাম্পাসে পৌঁছেছে। তবে সব কার্টনবন্দি অবস্থায় আছে। খুলে এগুলোর স্পেসিফিকেশন মেলানো হবে। এছাড়া সব কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, ফায়ার ফাইটিং ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপন কাজের জন্য গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর ই-জিপি পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে। কাজের প্রাক্কলিত দর ছিল ৪ কোটি ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫২ টাকা।

সর্বনিম্ন দরদাতা মরগান ইন্টারন্যাশনালের দর ছিল ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৮৬৮ টাকা, যা প্রাক্কলিত মূল্য থেকে ১০ ভাগ কম। কিন্তু টেন্ডার বাণিজ্যে সুবিধা না হওয়ায় টেন্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়।

এরপর একই বছরে ১০ অক্টোবর রি-টেন্ডার করে প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ জন্য অফিসিয়াল স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের স্পেসিফিকেশন ই-জিপিতে আপলোড করা হয়। এছাড়া প্রথম দরপত্রের সর্বনিু দরদাতার চেয়ে বেশি দরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এখানেও কোটি টাকার বেশি টেন্ডার বাণিজ্য হয়েছে। 

সূত্র জানায়, ফায়ার সিস্টেমের মালামাল প্রায় দুই মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু দরপত্র অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করা হয়নি বলে তা বুঝে নেয়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি।

ওই কমিটির প্রধান যবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্সের প্রফেসর ড. আনিছুর রহমান জানান, দরপত্রে যে স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়েছে-সে অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করা হয়নি।

এ কারণে তা গ্রহণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেও তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি যোগাযোগ করেনি। মালামাল সেই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে।

১৪টি লিফট এবং ফায়ার ফাইটিং ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম স্থাপনে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তদন্তে নেমেছে দুদক। বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দুদকের একটি টিম সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এবং কাগজপত্র সংগ্রহ করে। এ ব্যাপারে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

যবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন জানান, লিফটের মালামাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। ইভ্যালুয়েশন ও মালামাল বুঝে নেওয়াসহ এ ব্যাপারে একাধিক কমিটি রয়েছে।

ফলে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো মালামাল গ্রহণ করা হবে না। আর ফায়ার ফাইটিং ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেমের মালামাল গ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নোমান আল বিলাল বলেন, আমরা কোনো কথা বলব না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। তারাই ভালো বলতে পারবেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম