Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পাঁচ নির্বাচনে চারবার ঋণখেলাপি

জেলে সর্দার থেকে সন্দ্বীপের ‘রাজা’ মাঈন উদ্দিন মিশন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৬ লাখ টাকা খেলাপি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জেলে সর্দার থেকে সন্দ্বীপের ‘রাজা’ মাঈন উদ্দিন মিশন

সন্দ্বীপ থানার কাচিয়াপাড় ইউনিয়নের মাঈন উদ্দিন মিশন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, লুটপাট আর কমিশন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সন্দ্বীপজুড়ে তার বিশাল ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। নিরীহ জেলেদের জাল-নৌকা কেড়ে নিয়ে তিনি নিজস্ব মৎস্যজীবী বাহিনী করেছেন। বঙ্গোপসাগরের জলদস্যু বাহিনীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ। জেলে সর্দার থেকে তিনি সন্দ্বীপের রাজা বনে গেছেন! তার পেছনে চট্টগ্রাম এলাকার এক প্রভাবশালী এমপির মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ।

কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধী হলেও সরাসরি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। দুদফা সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিশন উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে নৌকার মাঝি। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন, পুলিশের রেকর্ড ও যুগান্তরের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সন্দ্বীপ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে মাঈন উদ্দিন মিশন একের পর এক ত্যাগী নেতাকে দল থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছেন।

মামলা-হামলা ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে অনেক নেতাকে সন্দ্বীপছাড়া করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। মিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তিনি পরিশোধ করেন না। ঋণের টাকায় কেনা নৌকা তিনি বিক্রি করেছেন। নির্বাচনে তিনি পাঁচবার প্রার্থী হলে চারবারই ঋণখেলাপির অভিযোগ উঠেছে। তবে একবার তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। জেলা পরিষদ থেকে তিন দফায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এ প্রসঙ্গে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, তিনি ৮ মাস আগে থানায় যোগদান করেছেন। এ বিষয়ে কোনো তথ্য তার জানা নেই।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে মাঈন উদ্দিন মিশন প্রথম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। এরপর ২০১১ সালে তিনি হারামিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। কিন্তু জেলা পরিষদের ৫৮ লাখ ৪ হাজার টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হন মিশন। ঋণখেলাপিতে প্রার্থিতা বাতিল হলেও ২১ লাখ টাকা পরিশোধ করে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে তিনটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে জেলা পরিষদ। তার বিরুদ্ধে সন্দ্বীপের বেড়িবাঁধসহ প্রতিটি প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে ২ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠে।

উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মাঈন উদ্দিন মিশনের বিরুদ্ধে সমবায় সমিতির ৪৭ লাখ টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তিনি খেলাপি হন। এ সংস্থা থেকে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তা বিক্রি করে পুরো টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। নির্বাচন কার্যালয়ে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পাঠানো চিঠিতে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কর্মকর্তা মিলন দাশ যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। অভিযোগ আমলে মিশনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে।

পরে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে মিশনের নাম নেই। চট্টগ্রাম জাতীয় পরিষদ থেকেও মিশন মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন তা পরিশোধ করেননি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি ঋণ রি-শিডিউল করেন।

২০১৪ সালের পর এক প্রভাবশালী এমপির হাত ধরে মাঈন উদ্দিন মিশন সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। এরপর কাউন্সিলরদের ভোটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুদফা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার উত্থান শুরু। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি সন্দ্বীপের ১০টি মৎস্যঘাট একে একে দখল করে নেন। প্রতিটি ঘাটের জেলেদের প্রতি মাসে মিশন বাহিনীকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ জাল ও নৌকা কেড়ে নেওয়া হয়।

মাঈন উদ্দিন মিশন যুগান্তরকে বলেন, তিনি ঋণখেলাপি নন। জেলা পরিষদের ঋণ তিনি রি-শিডিউল করেছেন। সমবায় সমিতির ঋণও তিনি শিডিউল অনুযায়ী পরিশোধ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তিনি জেলে সর্দার নন, কাছিয়াপাড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নেতা।

ঋণের টাকায় কেনা নৌকাটি তিনি বিক্রি করেননি। বরং সেটি জলদস্যুরা লুট করেছে। সন্দ্বীপে তার কোনো ক্যাডার বাহিনী নেই। থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তিনি কোনো দলীয় নেতাকে বের করে দেননি। কাউকে তিনি দলছাড়াও করেননি। সবাই স্বেচ্ছায় চট্টগ্রামে চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, কখনো তিনি বাকশাল করেননি। এগুলো অপপ্রচার। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, লুটপাট আর কমিশন বাণিজ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম