Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

কাউন্সিলর পদে বিএনপি প্রার্থী বিব্রত সমমনা দল

বিভ্রান্তি তৈরির পাশাপাশি সরকারি দলকেও বাড়তি সুবিধা দেবে

Icon

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাউন্সিলর পদে বিএনপি প্রার্থী বিব্রত সমমনা দল

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর। অভিন্ন দাবিতে ডিসেম্বর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনও করছেন তারা। কিন্তু আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অন্তত দুইশ নেতাকর্মী ভোটে অংশ নেওয়ায় অনেকটা বিব্রত সমমনা দলগুলো। তারা মনে করেন, দলীয় প্রতীক না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে রাজনৈতিক দিক থেকে বিভ্রান্তির জায়গা তৈরি করবে। এটা সরকারি দলকে কিছু বাড়তি সুবিধাও দেবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা ভোটের মাঠে রয়েছেন, তাদের ব্যাপারে বিএনপির কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা।

যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, বিএনপির পদধারী নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে চুপচাপ ঘরে বসে থাকবে না। তারা জয়ের জন্যই প্রার্থী হচ্ছেন। এজন্য তারা দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করবে, তাদের নিয়ে প্রচার চালাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটি করা হলে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যে দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে, এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ওয়ার্ডের নেতাদের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সেখানে তারাই যদি নির্বাচনি তৎপরতায় যুক্ত হন, তাহলে আন্দোলনে সফলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। জনগণের কাছে ভিন্ন বার্তা যাবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির উচিত হবে, দলের পদে থেকে যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তাদেরকে প্রথমে অনুরোধ করা অথবা সতর্ক করা। এতেও কাজ না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, সিটি করপোরেশনসহ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ হলো-মেয়র পদে বিএনপি কোনো দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না। কাউন্সিলরে দলীয় প্রতীক নেই। তবে স্থানীয় আধিপত্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা কারণে অনেকে চুপচাপ থাকতে পারেন না। সে জায়গা থেকে যারা অতি উৎসাহী, তাদের হয়তো কেউ কেউ প্রার্থী হচ্ছেন। বিএনপি যদি তাদের বিরত রাখতে পারে, নিশ্চিতভাবে তা ইতিবাচক হবে। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের কীভাবে ঠেকাবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, এটা রাজনৈতিক দিক থেকে বিভ্রান্তির জায়গা তৈরি করবে। সরকারি দলকে কিছু বাড়তি সুবিধাও দেবে। তারা (আওয়ামী লীগ) যে বলার চেষ্টা করছে নির্বাচনে বিএনপি প্রকোশ্যে আসছে না, ঘোমটা পরে আসছে। এই ক্যাম্পেইনটার সুযোগ করে দেবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা একটা সর্বাত্মক আন্দোলন প্রশ্নে একসঙ্গে আছি। সেখানে সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলররা তো লোকাল জনপ্রতিনিধি। আন্দোলনে তাদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে বা থাকা উচিত। তারা যদি নির্বাচনের তৎপরতায় যুক্ত হয়ে যান, তখন সেটা তো আন্দোলনের কিছুটা ক্ষতি হয়ই। সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যেহেতু পরস্পরবিরোধী হয়, সে জায়গায় থাকা উচিত নয়।

১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ভোটে না গিয়ে বরং ভোটকে অকার্যকর করা বা নিরুৎসাহিত করা, ভোটের প্রতি মানুষের যে অনীহা, তাদের (বিএনপির স্থানীয় নেতাদের) সেটার প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করা দরকার। কারণ, এখন তো নির্বাচনে ভোটই কাস্টিং হয় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। এ ভোটটাকে অবশ্যই বর্জন করা উচিত। আমরা আশা করব, তারা প্রত্যেকে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন এবং কেউই ভোটে অংশগ্রহণ করবেন না। আমরা অবশ্যই চাই তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এক্ষেত্রে এখন ভোটে অংশগ্রহণ করলে আমরা যারা সরকারের পতন চাই, তাদের হৃদয়ে আরও রক্তক্ষরণ বেড়ে যাবে। কোনো ফরমেটেই কেউ যদি নির্বাচন করে, এটাকে নিন্দা জানাই। একজন কর্মী যদি তার দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, তাহলে জনগণও রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাবে।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বিএনপিসহ আমরা কেউ এই সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচন বা জাতীয় নির্বাচনে যাব না, এটাই সিদ্ধান্ত। যদি কোনো দলের কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়, তার বিরুদ্ধে সে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরাও বলব। এখন যদি পদে না থেকে কেউ নির্বাচন করে, তাহলে তো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। পদে থাকলে অবশ্যই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিএনপির উচিত হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার। প্রাথমিক পদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, শুধু নির্বাচন বর্জন নয়, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা ভোট করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাঁচ সিটিতে পদধারী যেসব নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর ওইসব নেতার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রাক্কালে যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম