Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ

কাল সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়

আঘাত হানতে পারে কক্সবাজারে * সারা দেশে চলছে দাবদাহ, ৫ জেলায় তীব্র

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন 

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাল সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সোমবার সকালের দিকে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। আজকের মধ্যে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পরিণত হতে পারে গভীর নিম্নচাপে। এরপরই তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ ধারণ করতে পারে।

তখন এটির নাম হবে ‘মোচা’। কিন্তু এর আগেই আবহাওয়ার চরম ও রৌদ্র অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তৃতীয় দিনের মতো সোমবারও মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে প্রায় সারা দেশে।

ব্যারোমিটারের পারদ যেখানেই থাকুক না কেন, গরমের অনুভূতি ছিল অতি তীব্র তাপপ্রবাহের মতো। এ দিন ঢাকায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বেড়েছে। এটা গত ৩৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়।

এটিও গত ৯ বছরের মধ্যে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এতে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহের এই পরিস্থিতি চলতে পারে। পাশাপাশি দাবদাহ আরও বাড়তে পারে। দেশি-বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আবহাওয়ার বিশেষ পরিস্থিতি অতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন আবহাওয়া সংস্থার প্রকাশিত মডেল অনুযায়ী শুক্রবার নাগাদ এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ধারণা পাওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু বাতাসের ঘূর্ণি-কুণ্ডলী তৈরি থেকে লঘুচাপ এবং সুস্পষ্ট লঘুচাপের পর্যায় দ্রুত পার হয়ে যায়। ফলে ধারণার চেয়েও ১২ ঘণ্টা আগে সোমবার সকালে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি ঠিক থাকলে শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপটি বুধবার নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

এখানেই শেষ নয়, আগের মডেলগুলোয় মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে মোচার আছড়ে পড়ার ধারণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোমবারের মডেলে দেখা যায়, এটি এখন দিক পরিবর্তন করে প্রথমে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমদিক বরাবর এগিয়ে যেতে পারে।

এরপর তা কয়েকবার দিক পরিবর্তন করে গোটা উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-মধ্য এবং সব শেষে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর দাপিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এই হিসাবে বাংলাদেশের গোটা কক্সবাজার লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে নিম্নচাপটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, কোনো ঘূর্ণিঝড় বা এর আগের অবস্থাগুলো সম্পর্কে কখনোই বেশি আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। আবহাওয়ার মডেল তৈরিকালীন পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে যা তৈরি করা হয়, ১০-১২ ঘণ্টার ব্যবধানে তা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

সাধারণত আবহাওয়ার অবস্থা, ঘূর্ণিবায়ুর রসদ ও সাগরের অবস্থা অনুযায়ী এই পরিবর্তনগুলো ঘটে থাকে। তবে গভীর নিম্নচাপের পর্যায়ে যে মডেল তৈরি হয়, সেটির তথ্য অনেক সময় বাস্তবতার কাছাকাছি থাকে।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। এরপর বৃহস্পতিবার উত্তর, উত্তর-পশ্চিমদিক বরাবর পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোবে। এরপরই ‘মোচা’র পথ বদল হতে পারে। বাঁক নিয়ে তা উত্তর, উত্তর-পূর্বদিক বরাবর বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোতে পারে। 

বিএমডির আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, লঘুচাপ পরিস্থিতির ওপর সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে। এখনই বলা যাচ্ছে না এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে কোথায় এর ‘ল্যান্ডফল’ বা ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়বে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে কাছাকাছি তথ্য দেওয়া যাবে।

সারা দেশেই তাপপ্রবাহ : আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের বাকি এলাকায় কোথাও মৃদু বা কোথাও মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮ ডিগ্রি স্পর্শ করলে মাঝারি আর ৪০ বা এর বেশি হলে তা তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি পার হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সোমবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে গুলশানে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এর অনুভূতি ছিল ৪৪ ডিগ্রির মতো। এভাবে শহরের অন্যান্য স্থানেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করে।

সোমবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি, যা আগের দিন ছিল ৩৯.২ ডিগ্রি। অন্যদিকে এদিন ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি, যা রোববার ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিরাজমান তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

রেকর্ড তাপমাত্রা : বিএমডি জানিয়েছে, সোমবার চুয়াডাঙ্গায় যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সেটি গত ৯ বছরের মধ্যে রেকর্ড স্পর্শকারী। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে যশোরে ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিল।

এছাড়া এ দিন ঢাকায় যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সেটিও গত ৩৩ বছরের মে মাসের রেকর্ড ছুঁয়েছে। এর আগে ১৯৮৯ সালের ৮ মে যশোরে ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর কোনো মে মাসে সোমবারের মতো ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠেনি। সেই হিসাবে এটাই ৩৩ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম