Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আলোচনায় ফয়জুলকন্যার বিয়ে

ভাইয়ের জন্য বরিশালে আসছেন হাসানাত

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাইয়ের জন্য বরিশালে আসছেন হাসানাত

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি

ছোট ভাই মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য বরিশালে আসছেন পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়কমন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। আগামী সপ্তাহে তার বরিশালে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তার সফরের মধ্য দিয়ে চাচা খোকন সেরনিয়াবাত ও ভাতিজা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের মধ্যেকার দূরত্ব ঘুচবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমন হলে ভোটের মাঠে নৌকার প্রচার-প্রচারণা আরও গতি পাবে। এদিকে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমের মেয়ের বিয়ে পরবর্তী ওয়ালিমা (বৌ-ভাত) নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আজ সোমবার বড় ধরনের শোডাউন করে বরিশালে আসার কথা রয়েছে ফয়জুল করিমের। মেয়র প্রার্থী হিসাবে বরিশালে আসার দুদিন আগে শনিবার ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে ওয়ালিমাকে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি ম্যাচ হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল।

দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার দিন থেকে বরিশালে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। খোকন ও সাদিকের অনুসারীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ঢাকা থেকে ভার্চুয়াল বক্তব্যে সাদিক একাধিকবার দলীয় নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। যদিও কোনো লাভ হয়নি। তার অনুসারীরা প্রচারণার মাঠে নেই। খোকনের ১৬ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। কমিটিতে সাদিকপন্থি কাউকে রাখা হয়নি। কমিটির সবাই সাদিকবিরোধী হিসাবেই পরিচিত। এ বিভক্তি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। খোকন মেয়র হলে নগর ছাড়তে হবে এমন আলোচনা সাদিক অনুসারীদের মধ্যে। কারণ প্রায় ৯ বছর ধরে খোকনের সমর্থকরা দলে কোণঠাসা ছিলেন। ভোটের অংকে বরিশালে দুর্বল আওয়ামী লীগ। গত সিটি নির্বাচনগুলোর ভোটের হিসাবে মোট ভোটের শতকরা ৬০ ভাগ পায় বিএনপি। এর উপর নৌকার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মাঠে আছে লাঙ্গল-হাতপাখা। এমন পরিস্থিতিতে দলে বিভক্তি নৌকার জন্য অশনি সংকেত হিসাবে দেখছেন সমর্থকরা।

ভোট যুদ্ধের এমন জটিল সমীকরণের মধ্যে হাসানাতের বরিশালে আসার খবর। যদিও হাসানাত বা সাদিকের ওপর ভরসা নেই খোকন অনুসারীদের। খোকনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, সাদিক মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হাসানাত নৌকার পক্ষে কাজ করবেন এমন ভরসা আমাদের নেই। তবু হাসানাতের আসার খবরে ভালো কিছু আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

হাসানাত ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার ২-১ দিন পর বরিশালে আসবেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। মন্ত্রী পদমর্যাদা ও এমপি হওয়ার কারণে তিনি অবশ্য নগরে আসবেন না। নির্বাচনি আচরণবিধি এড়াতে নগরের বাইরে বাবুগঞ্জ বা উজিরপুর উপজেলায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি যোগ দিতে পারেন। সেখানে নির্বাচনি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। সভায় সাদিকও যোগ দেবেন। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, হাসানাত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বড় ভাই। তাকে নিয়ে সম্প্রতি খোকন অনুসারী কয়েক নেতার নানা আপত্তিকর মন্তব্যে শীর্ষ নেতারা বিরক্ত। এ ছাড়া হাসানাতও চাইছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার দিকনির্দেশনা নিয়ে বরিশালে আসতে।

এদিকে, আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করিম। কারণ শনিবার ঢাকায় তার মেয়ের ওয়ালিমা অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আসম আবদুর রব, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা যোগ দেন। এতে বরিশালের সাবেক মেয়র ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার এবং জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসও ছিলেন অনুষ্ঠানে। এছাড়াও ছিলেন আবুল হাসানাত আমিনী, ববি হাজ্জাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।

বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ালিমার আয়োজন করে মূলত ছেলে পক্ষ। এখানে মেয়েপক্ষের কিছু লোকও থাকে। এমন একটি আয়োজনে ছেলের শ্বশুরের আমন্ত্রণে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের যোগ দেওয়া অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ। এর ওপর সেই শ্বশুর যদি আবার আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী হন তাহলে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ালিমা অনুষ্ঠানের মাত্র দুদিন পর বড় শোভাযাত্রা সহকারে বরিশালে আসার কর্মসূচি রয়েছে ফয়জুল করিমের। এ দুই আয়োজনের মধ্যে অবশ্যই কোনো না কোনো যোগসূত্র আছে।

এ সম্পর্কে হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করিম বলেন, এটি পারিবারিক আয়োজন। একটি রাজনৈতিক দলে আছি তাই অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সবাইকে দাওয়াত দিয়েছি। তবে ওয়ালিমায় রাজনৈতিক কোনো আলোচনা হয়নি।

ইসলামী যুব আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মো. সানাউল্লাহ বলেন, সোমবার বরিশালে আসার কথা রয়েছে ফয়জুল করিমের। তাকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক আয়োজন করেছি আমরা। নগরের গড়িয়ার পাড় এলাকা থেকে শোভাযাত্রা সহকারে তাকে নিয়ে আসা হবে জিলা স্কুল এলাকায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করব আমরা।

এদিকে, বরিশালের মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ফয়জুল করিমকে মনোনয়ন দেওয়ায় বেশ খানিকটা বিস্মিত সবাই। তার প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের ইন্ধনে ফয়জুল প্রার্থী হয়েছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম