নাজাতের দশ দিন
সিয়াম সাধনায় যত্নবানদের জন্য পুরস্কার
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিয়াম সাধনায় যত্নবানদের জন্য পুরস্কার। প্রতীকী ছবি
রমজানুল মুবারকের আজ ২৯ তারিখ। হতে পারে আজই এ মাসের শেষ দিন। মাহে রমজানের পর আসে মুসলিম মিল্লাতের বার্ষিক প্রধান দুটি আনন্দ উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। ঈদ অর্থ আনন্দ। আর ফিতর বলতে রোজার সমাপ্তি কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া উদ্দেশ্য। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থাকার পর তাতে সমাপ্তি ঘটানো ও দিনের বেলায় পানাহারের স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে যাওয়া উপলক্ষ্যে আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত।
এটি শুধু অনুমতি নয়, বরং অনেকটা বাধ্যতামূলক নির্দেশ। কেননা শাওয়ালের প্রথম দিনে রোজা রাখাই নিষিদ্ধ। দুই ঈদের দিনে পানাহার করা ও আল্লাহর নিয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করা অবশ্য পালনীয় করার তাৎপর্য অনেক গভীর। মহানবি (সা.) হিজরত করে মদিনায় এসে দেখলেন এখানকার বাসিন্দারা বছরের দুটি দিন আনন্দ উৎসবে কাটায়। যদিও এর আগে এখানকার অনেকে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন; কিন্তু প্রথাটি চালু ছিল। যেহেতু এতে পৌত্তলিকতার ছাপ ছিল, এজন্য মুসলমানদের তাতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আল্লাহর নবি (সা.) তাদের জানালেন, আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের আরও উন্নত ও উত্তম দুটি উপলক্ষ্য দান করেছেন আনন্দ উৎসবের জন্য। একটি রমজান মাসের শেষে শাওয়ালের প্রথম তারিখে। আরেকটি জিলহজ মাসের দশম তারিখে বা হজের পরের দিন। দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারার জন্য দুটি ঈদ নির্ধারিত হয়েছে।
ঈদুল ফিতরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। পাশাপাশি দিতে হয় সদকাতুল ফিতর। আর ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের পাশাপাশি পশু কুরবানি করতে হয়। দুই ঈদেই অপরিহার্য অনুষঙ্গ নামাজ রাখা হয়েছে এ বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য যে, পৃথিবীতে মানুষের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য মহান স্রষ্টার ইবাদত করা। এখানে তার লাগামহীন আচরণ ও ক্রিয়াকলাপের সুযোগ নেই। আনন্দ-বিনোদনের সময়ও তাকে স্মরণ রাখতে হবে মহান প্রভুর প্রতি আনুগত্যের কথা। তাঁর প্রতি নিজেকে সমর্পিত করার চেতনা কখনোই অনুপস্থিত থাকতে পারবে না মুমিনের জীবনে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর পার্থক্য এখানেই।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ ধ্বনিতে পরিবেশ মুখরিত করতে করতে মুসলমানরা যখন ঈদগাহের উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা দেন এবং ঈদের নামাজ আদায়ের পর দোয়া করতে থাকেন, তখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়ার সাগরে ঢেউ ওঠে। তিনি ফেরেশতাদের সামনে এসব মানুষের জন্য খুশি প্রকাশ করেন এবং তাদের অতীত পাপরাশি শুধু মাফ নয় বরং পরিবর্তে সেই পরিমাণে সওয়াব বরাদ্দেরও ঘোষণা দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না এ সুসংবাদ ও পুরস্কার তাদের জন্য, যারা মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় যত্নবান ছিল। পক্ষান্তরে যারা এ মাসের কর্তব্য পালনে উদাসীন ছিল, তাদের জন্য কোনো সুসংবাদ নেই। আছে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাঁর সুসংবাদের অধিকারী করুন। প্রকৃত খুশি ও উভয় জগতের কল্যাণ আমাদের নসিব করুন। সবাইকে ঈদ মুবারক।
লেখক : খতিব, গাওসুল আজম জামে মসজিদ, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা