বরিশাল সিটি নির্বাচন
চাচার পক্ষে মাঠে নামার ঘোষণা মেয়র সাদিকের
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশালের বর্তমান মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় সাদিক বলেন, ‘যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি আমার চাচা। আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সন্তান। তার জন্য মাঠে নামব আমরা সবাই। এখানে তৃতীয় পক্ষকে সুযোগ নিতে দেওয়া যাবে না।
শনিবার ঢাকায় ঘোষণা করা হয় সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম। বরিশালের বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহসহ ৬ জন দলীয় মনোনয়ন চাইলেও নৌকা পান তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।
শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে খোকন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপন ভাগ্নে এবং মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক পদে থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ছোট ভাই। দলীয় মনোনয়নের এই ঘোষণার পর অনেকটাই থমকে যায় বরিশালের সাদিক অনুসারীরা।
এর বিপরীতে আনন্দ উল্লাসে মাতে তার বিরোধীপক্ষ। শনিবার নগরে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে হয় আনন্দ মিছিল এবং চলে মিষ্টি বিতরণ। একই সঙ্গে লঞ্চঘাট বাস টার্মিনাল আর থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড দখলে নেওয়ার মহড়াও শুরু হয় এখানে।
রোববার রাতে নগরে সাদিক অনুসারীরা পালটা মোটরসাইকেল মহড়া দিলে ছড়ায় উত্তেজনা। একইভাবে সোমবার নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাদিকের পক্ষে হয় মিছিল। সবকিছু মিলিয়ে যখন ক্রমেই জটিল হচ্ছিল পরিস্থিতি ঠিক সেই সময়ে এই ঘোষণা দিলেন সাদিক।
মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ এবং নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাদের মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল নগরের কালীবাড়ি রোডের বাসভবনে আসার জন্য বলেন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক।
একই সঙ্গে আসতে বলা হয় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও। সবাই জড়ো হওয়ার পর ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন মেয়র সাদিক। ৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেকেই মনে কষ্ট পেলেও আমি পাইনি। কারণ দলীয় সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা আমি মাথা পেতে নিয়েছি।
তাছাড়া যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি আমার আপন চাচা। আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সন্তান। তার পক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামব আমরা। ভোটারদের মন জয় করে যে কোনো মূল্যে তাকে জয়ী করতে হবে আমাদের।’ এ সময় বরিশাল প্রান্তে থাকা দলীয় নেতাকর্মীরা তুমুল করতালির মাধ্যমে সাদিককে অভিনন্দন জানান।
মেয়র সাদিক বলেন, ‘সংগঠন করতে এসেছি, আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে এসেছি। মনোনয়ন পাইনি তো কী হয়েছে? সামনে অনেক সময় রয়েছে। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের জন্য, নেত্রীর জন্য কাজ করব।’ তৃতীয় শক্তির কথা উরেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার চাচা মনোনয়ন পেয়েছেন, তার জন্য আমরা সবাই কাজ করব।
কিন্তু সবাইকে সাবধান থাকতে হবে তৃতীয় শক্তির বিষয়ে। আমার না পাওয়া আর চাচার পাওয়া, এই বিষয়টাকে ইস্যু করে যেন তৃতীয় পক্ষ কোনো সুবিধা নিতে না পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে। বরিশাল এখন যেভাবে সন্ত্রাসমুক্ত শান্তির শহর তেমনি এখানে শান্তি বজায় রাখতে হবে।’
বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে বরিশাল প্রান্তে থাকা কয়েকজন নেতার নাম ধরে ডেকে তাদের কুশল জিজ্ঞেস করেন সাদিক। সব নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। নৌকার জয় নিশ্চিত করতে হবে। এখানে ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’
সভায় দেওয়া বক্তব্যে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা আপনার এই ঘোষণাটির অপেক্ষায় ছিলাম। বরিশালে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটাই আমাদের কাছে চূড়ান্ত।
আজ আপনি যে ঘোষণা দিলেন তাতে নেত্রীর প্রতি আপনার চূড়ান্ত আনুগত্যের প্রমাণ মিলেছে। আমরা বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামব। নৌকার জয় নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ।’
মেয়র সাদিকের এই ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে।
এখানে আমার পক্ষে অনেকেই যার যার মতো বলতে পারে বা ঘোষণা দিতে পারে। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে এটুকু বলব যে, বরিশালের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনি মাঠে নামব আমি। সবার পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হবে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড। আমি বরিশালের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।’